কৃষ্ণচূড়ার সমারোহে রঙিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

চলতি পথে পথিকের চোখে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জাবি প্রতিনিধি

গ্রীষ্মের খরতাপে যখন চারদিকে কাঠফাটা রোদ্দুর, ঠিক তখনই মাঝে মধ্যে দমকা হাওয়ায় দোল খাচ্ছে নজরকাড়া রঙিন ফুল আবার কখনো ঝরে পড়ছে গাছতলায়। চলতি পথে হঠাৎ করেই পথিকের চোখে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা। বিমোহিত দৃষ্টিতে অবাক হয়ে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করছে সবাই। এমনই নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়া ফুলের মায়ায় জড়িয়েছে দেশের একমাত্র ও পূর্ণাঙ্গ আবাসিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সবুজের স্বর্গখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রঙিন কৃষ্ণচূড়া এনে দিয়েছে এক অনন্য মাত্রা। কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য বুঝাতে ভক্ত অনুরাগীদের জন্য রবী ঠাকুরের ‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী, কর্ণে তেমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী’ গানটির যেন সার্থক চিত্রায়ন ঘটেছে এখানে। গ্রীষ্মের শুরুতেই এই বিশাল ক্যাম্পাস ছেয়ে গেছে লাল রঙে, যা দেখে মনে হচ্ছে এ যেন কৃষ্ণচূড়ার এক বৃহৎ আড্ডাস্থল। সূর্যের সবটুকু উত্তাপ কেড়ে নিয়েছে টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া। প্রখর রোদে পুড়ে জানান দিচ্ছে তার সৌন্দর্যের বার্তা। প্রকৃতিতে নীল আকাশের ক্যানভাসে জ্বলছে গাঢ় রক্তিম রং, এ যেন লাল রঙের এক মায়াবি ক্যানভাস। ৬৭৯ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোটিই যেন কৃষ্ণচূড়ার দখলে। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী, পরিবহন চত্বর, বটতলা, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে, ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন রাস্তা ও আবাসিক হলের পাশে এবং প্রায় সব একাডেমিক ভবনের সামনেই ফুটে আছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের বর্ণ-বৈচিত্র্য লক্ষ্যণীয়। গাঢ় লাল, কমলা, হলুদ এবং হালকা হলুদের এক দীর্ঘ বর্ণালীতে বিস্তৃত এর পাপড়ির রং। প্রথম ফোটার উচ্ছ্বাস আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে আসলেও বর্ষার শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়ার গাছ থেকে ফুলের রেশ হারিয়ে যায় না। শুধু ফুল নয়, পাতার ঐশ্বর্যেও কৃষ্ণচূড়া অনন্য। এই পাতার সবুজ রং এবং সূক্ষ্ম আকৃতি অতিশয় আকর্ষণীয়।

কৃষ্ণচূড়া সম্পর্কে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলেছেন- কৃষ্ণচূড়া তিন রঙের হয়ে থাকে। লাল, হলুদ ও সাদা। এটি একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (উবষড়হরী ৎবমরধ)। ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত এই বৃক্ষটি গুলমোহর নামেও পরিচিত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশ অঞ্চলব্যাপী ছড়ায়। ফুলগুলো বড় বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। যা প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০ থেকে ৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট। ভারতবর্ষে এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন।

কৃষ্ণচূড়ার এই রক্তিম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জুবাইর ইসলাম জিয়ান বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও ক্যাম্পাসে বেশি পরিমাণে গাছপালা থাকায় কষ্ট একটু কম হয়। বৈশাখের আম কুড়ানো, উজানের মাছ ধরা ইত্যাদি স্মৃতি যখন মনকে ভারি করে দেয়, তখন কৃষ্ণচূড়ার নুয়ে পড়া রঙিন ফুলে তাকালে মন অনেকটা হালকা হয়ে ওঠে। গরমে নারকীয় পরিবেশ তৈরি হলেও জাবির ফুলেরা আছে, কৃষ্ণচূড়া আছে, সবুজ ঘাস আছে, হাওয়া আছে ফলে উত্তাপের মধ্যেও একে স্বর্গ মনে হয়।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান লিমা বলেন, ফুল পছন্দ নয় এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। এর মধ্যে কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রায় সবারই পছন্দের। ক্যাম্পাসে পড়াশোনার ব্যস্ততায় শত ক্লান্তিতেও কৃষ্ণচূড়ার রঙিন সৌন্দর্যে মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যায়। প্রেমময় এই ঋতুতে কৃষ্ণচূড়া ফুল যেন অপরূপ এক সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি।

বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন রাব্বানী বলেন, এই গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়া ফুল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমার মতে কৃষ্ণচূড়া হচ্ছে প্রেমের এক জলজ্যান্ত প্রতীক, যা ক্যাম্পাসের সকল প্রেমিককে এক অন্যরকম বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। বেঁচে থাকুক প্রেম, ফুটে থাকুক কৃষ্ণচূড়া।

ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী পুষ্পিতা সৃষ্টি বলেন, এই খটখটে রুক্ষ আবহাওয়ার মধ্যেও যেন এক নয়নাভিরাম বার্তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে হাজির কৃষ্ণচূড়া। এর নজরকাড়া লাল পাপড়ির সৌন্দর্য ক্যাম্পাসের ক্লান্তিমাখা রূপে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। যেন কৃষ্ণচূড়া আর ভালোবাসা একই সুতোয় গাঁথা, যার লালিমার ঝলক ছড়িয়ে পড়েছে সবার মধ্যে।