চাহিদামতো টাকা দিলেই নিজের তৈরি ওয়েবসাইট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ কিংবা কোভিড-১৯ টিকার সনদ বানিয়ে সরবরাহ করতেন লিটন মোল্লা নামে এক ব্যক্তি। আর তাকে এনআইডি সার্ভার থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতেন খোদ নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. জামাল উদ্দিন।
দেখতে হুবহু একইরকম হলেও নকল ওয়েবসাইট থেকে বানানো এসব নকল সনদ বাণিজ্যে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন লিটন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ করে চাহিদামতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আদায় করা হতো এসব টাকা।
দীর্ঘদিন গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে অবস্থান শনাক্তের পর অবশেষে তাদের গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তাদের মধ্যে লিটন মোল্লাকে বাগেরহাট থেকে ও জামাল উদ্দিনকে পাবনা থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস বিভাগের পৃথক দুইটি টিম।
গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নজরদারি করতে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান পায় সিটিটিসির ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস বিভাগ। দীর্ঘদিন তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে অবস্থান শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার জামাল উদ্দিন নির্বাচন কমিশনে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। তার সহায়তায় লিটন মোল্লা নির্বাচন কমিশন সার্ভার থেকে এনআইডি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতেন। তারা অর্থের বিনিময়ে জাল এনআইডি, হারানো এনআইডির কপি তৈরি, এনআইডির তথ্য সংশোধন, জন্ম নিবন্ধনের ডিজিটাল কপি ও নাম সংশোধন, কোভিড-১৯ এর টিকা সনদ ও টিন সার্টিফিকেটের কপি তৈরি করে সরবরাহ করতেন। তিনি আরো বলেন, তারা কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতেন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তারা গ্রাহক সংগ্রহ করতেন। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী লিটন নিজের তৈরি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এসব জাল সনদ তৈরি করে গ্রাহকদের দিতেন এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিতেন। এভাবে তারা প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে স্বীকার করেন। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসির প্রধান বলেন, এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী জড়িত আছেন। চক্রে আর কারা জড়িত, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।