উন্নয়নে আরো এক ধাপ এগিয়ে

যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু সম্পূর্ণ দৃশ্যমান

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ

যমুনার বুকে উত্তরাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যেই এ সেতু সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশাপাশি ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ রেলসেতু নির্মাণে উন্নয়নের আরো এক ধাপ এগিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজ করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেনচার। ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেনচার। এছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজ চলছে। এ রেল সেতু নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা দিনরাত কাজ করছেন। এ সেতুর ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যান বসিয়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সুপার স্ট্রাকচার এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। এ সেতুর অ্যাডজাস্টমেন্টের কাজ চলছে এবং উভয়পাশের স্টেশন নির্মাণ, স্লিপারবিহীন রেলপথ স্থাপনসহ কিছু কাজ এখন বাকি রয়েছে এবং রেলসেতুতে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এ সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশাপাশি যমুনার বুকে নির্মাণাধীন এ সেতু ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে আরো একটি নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে। এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। এতে কমে যাবে পরিবহন খরচও এবং মহাসড়কের ওপর চাপও কিছুটা কমবে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজেই ঢাকাসহ সারা দেশে পাঠানো যাবে। এতে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার চাকা ঘুরবে। ওই সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল লি. সাব স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সেতুতে ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যান বসানো শেষ হয়েছে এবং সেতুর ওপরে রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের ৯৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের ৯০ শতাংশ ও ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডব্লিউডি-১ প্যাকেজে ২ হাজার ৯৭৯ ও ডব্লিউডি-টু প্যাকেজে ২ হাজার ৮৪১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি স্প্যানের ওপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। এতে সেতুর ওপর দিয়ে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ওই সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, রেলসেতুর ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সুপার স্টাকচারগুলোর মেইন মেম্বারগুলো লাগানো হয়েছে এবং কার্ভ, মেটারল কর্টসহ ছোটখাট মেম্বারগুলোও লাগানো হয়েছে। এখন শুধু অ্যাডজাস্টমেন্ট বাকি রয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট ও লেভেল ঠিক করা হচ্ছে। ড্রেনসহ বিভিন্ন ছোটখাট কাজ শেষ হয়ে গেছে। দুই পাশের স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ, প্লাটফর্ম স্থাপনের কাজ ও ট্র্যাকের কাজ চলছে। ছোট ছোট কিছু পেরিমিটার ফেল্ট বাকি রয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে এ সেতুর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। যমুনা নদীর বুকে এ রেলসেতু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরো প্রশংসিত হচ্ছে বলে বিশিষ্টজনরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।