কায়রোতে যুদ্ধবিরতি আলোচনা ব্যর্থ : রাফায় হামলা শুরু
* কোটি কোটি ডলারের মার্কিন অস্ত্র পাচ্ছে ইসরায়েল
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি যুদ্ধবিরতি ও হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তির বিষয়ে কায়রোতে চলমান আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। বরাবরের মতো বৃহস্পতিবারও কোনও সমাধান ছাড়াই শেষ হলো এই আলোচনা। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হুমকিকে উপেক্ষা করে এদিনই পূর্ব রাফাহতে বোমা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাকারী জাতিসংঘ সংস্থা জানিয়েছে গাজা নগরীর দক্ষিণে ইসরাইল সামরিক অভিযান জোরদার করার পর থেকে গত তিন দিনে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ রাফাহ থেকে পালিয়ে গেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দক্ষিণ গাজায় হামলা করলে দেশটিকে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিলেন বাইডেন। এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, গাজায় সংঘর্ষ থামানোর প্রচেষ্টায় কায়রোতে অনুষ্ঠিত পরোক্ষ আলোচনার সর্বশেষ দফা শেষ হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাফাহ এবং গাজা উপত্যকার অন্যান্য অংশে অভিযান চালিয়ে যাবে ইসরায়েল। ওই কর্মকর্তা আর বলেন, দেশটি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে হামাসের প্রস্তাবের বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে আপত্তির কথা জানিয়েছে। একটি ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘প্রয়োজনে মাটি আঁকড়ে ধরে হলেও আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। তবে আমাদের সক্ষমতা এর চেয়েও বেশি।’ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ বলেছে, শহরের পূর্ব উপকণ্ঠে ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলোতে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক রকেট এবং মর্টার নিক্ষেপ করেছে তাদের যোদ্ধারা। রাফাহ শহরের টাউন এলাকায় এখনও ইসরায়েলি স্থল বাহিনী প্রবেশ করেনি। সেখানকার বাসিন্দা এবং চিকিৎসকরা এখন পর্যন্ত অক্ষত আছ্নে। তবে পূর্ব ব্রাজিলের প্রতিবেশী এলাকায় একটি মসজিদের কাছে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজে ধ্বংসস্তূপে পরিণত মিনারটির পাশে কম্বলে মোড়ানো দুটি মরদেহ দেখা গেছে। এছাড়া, ইসরায়েলি হামলায় রাফাহর সাবরা এলাকায় দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী আল-মুজাহেদিন ব্রিগেডের এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ও তার পরিবার, দলটির আরেক নেতার পরিবার এবং চিকিৎসক রয়েছেন। ইসরায়েল বলেছে হামাস জঙ্গিরা রাফাতে লুকিয়ে আছে। এখানে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ইসরায়েলে মার্কিন বোমার একটি চালান স্থগিত করার কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই ঘোষণার দুদিন যেতে না যেতেই জানা গেল, আরো কোটি কোটি ডলারের মার্কিন অস্ত্র পেতে যাচ্ছে ইসরায়েল। সেগুলোর এখন শুধু চালানের অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে, দেশটির জন্য নির্ধারিত অস্ত্রের চালানগুলো পর্যালোচনার কথা বলেছিল মার্কিন প্রশাসন। তবে এই চালান কবে নাগাদ ইসরায়েলের কাছে পৌঁছাবে সে তথ্য জানা যায়নি। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। চলতি সপ্তাহে এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অস্ত্র রাফাহ শহরের ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। সেখানে ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। তাই এমন উদ্বেগের মধ্যে ইসরায়েলকে অস্ত্রের চালান সরবরাহের বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেছে মার্কিন প্রশাসন। ফলস্বরূপ প্রাথমিকভাবে মার্কিন বোমার একটি চালান স্থগিত করেছে দেশটি। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে রাফাহ শহরে হামলার পরিকল্পনা বাতিলের জন্য ইসরায়েলকে বারবার চাপ দিয়ে আসছে বাইডেন প্রশাসন। বিলম্বিত হওয়া এই বোমা চালানের মূল্য ‘কোটি কোটি’ ডলারের বলে অনুমান করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান সিনেটর জিম রিশ বলেছেন, বিলম্বিত এই চালানে জয়েন্ট ডিরেনক্ট অ্যাটাক মিউনিশন-সহ (জেডিএএমএস) এবং ট্যাংক রাউন্ড, মর্টার এবং সাঁজোয়া কৌশলগত যানবাহন রয়েছে। সেগুলোসহ ইসরায়েলের জন্য অন্যান্য আরো সামরিক সরঞ্জামের বড় বড় চালান আটকে রাখা হয়েছে। রিশ বলেছেন, এই যুদ্ধাস্ত্রগুলো যত দ্রুত অনুমোদনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, তা ততটা অগ্রসর হতে পারছে না। কেন না, ইসরায়েলের জন্য সহায়তার বিষয়টি সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই চালানের কিছু কাজ ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলে অতিরিক্ত অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন তারা। এর আগে,মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর একটি সাক্ষাৎকারে বাইডেন সতর্ক করে বলেছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহতে হামলা করলে মার্কিন অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধ করে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বাস করেন রাফায় বড় ধরনের অভিযান চালিয়েও হামাসকে নির্মূল করতে পারবে না ইসরায়েল। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে কিরবি বলেন, ইসরায়েল জোরালোভাবেই হামাসকে চাপের মুখে ফেলতে সক্ষম হয়েছে এবং সেটাই যথেষ্ট ছিল। নতুন করে রাফাহে আগ্রাসন শুধু বেসামরিকদের ঝুঁকিই বাড়াবে; এর বেশি কিছু না। তিনি বলেন, রাফাহ আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সাহায্য করছে না। তবে তার মানে এই না যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে নেই বা হামাসের নির্মূল চায় না। আমরা এখনো ইসরায়েলকে নিয়ে আশাবাদী। আমরা শুধু রাফাহ আগ্রাসনের বিকল্প নিয়ে আলোচনা করছি। কিরবি বলেন, সবাই অস্ত্রের চালান স্থগিত নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু অস্ত্রের চালান এখনও ইসরায়েলে যাচ্ছে। তারা এখনও আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই পাচ্ছে। কিরবি আরো সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ইসরায়েল যদি রাফাতে বড় আকারে অভিযানে যায়, তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে যে ধরনের সমর্থন দিচ্ছেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন।
সূত্র : বিবিসি ও আল জাজিরা।