উন্মুক্ত গবাদিপশু পালন

শূন্য থেকে ১৭টি গরুর মালিক কৃষক হাসমত

প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এ.এইচ.এম. আরিফ, কুষ্টিয়া

কঠোর শ্রম সাধনা আর চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে উন্মুক্ত গবাদিপশু পালন করে শূন্য থেকে সফল খামারি কৃষক কুষ্টিয়া সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরা গ্রামের মৃত সোরাপ মন্ডলের ছেলে কৃষক হাসমত মন্ডল (৭০)।

অন্যের পশু দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের মধ্যে পশুর মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তিনি। একসময় কঠোর শ্রমণ্ডসাধনা আর চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আজ শূন্য হাতে ১৭টি গরুর মালিক হয়েছেন হাসমত মন্ডল। জানা যায়, হাসমত মন্ডল প্রায় ৩০ বছর পূর্বে বাবার সংসার থেকে শূন্য হাতে পৃথক (আলাদা) হয়ে প্রতিবেশী জলিল কারিগরের নিকট থেকে একটি ছোট বকনা বাছুর বর্গা নিয়ে উন্মুক্ত চারণভূমিতে পালন শুরু করেন। পালিত সেই বকনা বাছুর আদর যত্নে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে সেই সাথে হাসমত মন্ডলও সফলতার বীজ বপন করতে থাকেন পালিত বকনা বাছুরের বুকে। বাছুরটা একসময় গর্ভবতী হয়। সেই ছোট বকনা বাছুরটির কোলজুড়ে আসে একটি কাজল রঙের বকনা বাছুর। শর্তানুযায়ী হাসতম মন্ডল পালিত বকনার থেকে প্রথম যে বাছুর হবে তার মালিকানা পাবেন। দ্বিতীয় বাছুর পাবেন বকনার মালিক জলিল কারিগর। পালিত বকনার প্রথম বা”চা বকনা হওয়ায় হাসমত মন্ডলের কপাল যেন খুলে গেল। তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। গাভীটির দুধ বিক্রি করে কোনোমতে হাসতম মন্ডলের সংসারটি টানাপড়নের মধ্যদিয়ে চলতে থাকে। এভাবেই কাটতে থাকে হাসতম মন্ডলের দিন গরু-বাছুর নিয়ে উন্মুক্ত চারণভূমির মাঠে মাঠে।

গরুর খড়-ভূষি কেনার পয়সা না থাকায় সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার সময় কাটে গরু চরিয়ে। সকাল-বিকাল মোড়ের চায়ের দোকানে যেন ১ মিনিটও বসার ফুসরৎ নেই তার। নেই অযথা কারো সাথে দাঁড়িয়ে বুকের ভেতরে জমানো না বলা কথা বলার। হাসমত মন্ডল বলেন, আমি একটি ছোট বকনা বাছুর বর্গা নিয়েছিলাম। সেই বকনা বাছুর থেকে বছর দুয়েক পর একটি বকনা বাছুর হয়। আমার পাওনা ওই বকনা বাছুরটি প্রায় ৩ বছর পর একটি বা”চার জন্ম দেয়। বকনার প্রথম বাছুরটাও ছিল বকনা বাছুর। পাওনা ওই বকনা বাছুরটি আল্লাহর রহমতে আমায় আজ পর্যন্ত ১৯টি বাছুর দিয়েছে। ওই একটি পালিত গরু থেকে আজ আমার পালে ১৭টি গরু রয়েছে। বর্তমানে আমার পালে ছয়টি গাভি রয়েছে। ছয়টি গাভি প্রতি বছর একটি করে বা”চার জন্ম দেয়। গাভিগুলো প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ কেজি দুধ দেয়। প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার দুধ বিক্রি করে থাকি। বছর শেষে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা গরু বিক্রি করে থাকি। হাসমত মন্ডলের ঘরে পাঁচ সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ের বিয়েতে ৫টি গরু দিয়েছেন উপহার হিসেবে। এর মধ্যে তিন বিঘা জমিও বন্ধক রেখেছেন। হাসতম মন্ডল আরো বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই বাবার গরু চরিয়ে আসছি। তখন থেকেই বুঝেছিলাম গাভি গরু পালন করা খুবই লাভজনক।

গরুর খাবার কীভাবে জোগান দিয়ে থাকেন- জানতে চাইলে হাসমত মন্ডল বলেন, আমি প্রায় সময় গরু মাঠে চরিয়ে থাকি, বাড়িতে তেমন একটা খাবার দেয়া লাগে না বললেই চলে। রোদণ্ডবৃষ্টি যাই হোক, আমি গরু মাঠে চরিয়ে থাকি। কোথাও ঋণী হয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঋণ দেখলে ভয় পাই, আর ঋণ নেওয়ার কোনো প্রয়োজনও আমার পড়ে না, যখন টাকার খুব বেশি দরকার হয় তখন পাল থেকে একটি গরু বিক্রি করে সেই বড় ধরনের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকি। সংসারের খরচের জন্য তো গাভি থেকে দুধ বিক্রি করে নগদ টাকা পেয়ে থাকি। আপনার কখনো চায়ের দোকানে বসে বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করতে ই”েছ হয় না- এমন প্রশ্নের জবাবে কঠোর পরিশ্রমি হাসমত মন্ডল বলেন, আমার সেই সময় কোথায়? খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গরুগুলোকে পানি দিই, খাবার দিই। আর দুধের গাভি থেকে দুধ দোহন করি। সাথে বেলা বাড়ে। এবারে গোসল খাওয়া শেষে গরু চরাতে মাঠে চলে যায়। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত নেমে আসে। সব গরু গোয়ালে তুলে আবার পানি দিই। মশা তাড়াবার জন্য ধোঁয়া দিই। এরপর হাতমুখ ধুয়ে খেতে খেতে প্রায় রাত অর্ধেক হয়ে যায়। এবার বলুন কাজ ফেলে কখন চায়ের দোকানে মোড়ে বসে গল্প করব? গরুর রোগবালাই সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার গরু রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এরপরও আল্লাহর রহমতে কোনো রোগবালাই হয় না। ডাক্তার-ওষুধ লাগে না। বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হ”েছ উন্মুক্ত চারণভূমি দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসাটা।