মিয়ানমার থেকে সিগারেট পাচার
উখিয়ায় রাতারাতি অনেকে বনে গেছে কোটিপতি চোরাকারবারি!
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা
হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে বনে যাওয়া ধনী ব্যক্তিদের নজরদারি করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব ধনী ব্যক্তিদের অর্থের উৎস যদি মাদক ও অবৈধ চোরাই মাল ব্যবসার মাধ্যমে হয়ে থাকে, তাহলে তাদের আইনের আওতায় এনে অবৈধ উপায়ে আয়কৃত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হবে বলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
এদিকে উখিয়ায়ও দেখা মিলেছে হঠাৎ বনে যাওয়া অসংখ্য কোটিপতি। এদের মধ্যে অবৈধভাবে আয়কৃত সম্পদ অর্জন করা ঘুমধুমের আজুখাইয়া এলাকার সাইফুল ইসলাম মামুন ও উখিয়া উত্তরপুকুরিয়া এলাকার রায়হান নামে দুই যুবক শীর্ষস্থান দখল করেছেন।
তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে এসেছে, তারা দুজনই রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমার থেকে অবৈধ সিগারেটসহ বিভিন্ন চোরাইপই্য এনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে অটেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
তারা দুজনই শালা-দুলাভাইয়ের সম্পর্ক। তাদের রয়েছে চোরাচালানের ছোট বড় অসংখ্য সিন্ডিকেট। দুলাভাই সাইফুল মিয়ানমার থেকে বড় চালান এনে পুকুরিয়া রায়হানের বাড়িতে মালগুলো স্টক করে সু-কৌশলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব মাল পাচার করতেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা এসব অবৈধ ব্যবসায় বর্তমানে সফল হয়ে নামে বেনামে গড়ে তুলেন অনেক সম্পদ। সম্প্রতি তারা দুজনে কোটবাজারে দুইটি দোকান ক্রয় করেছেন প্রায় ৭০ লাখ টাকায়। নামে-বেনামে কক্সবাজারসহ উখিয়ার বিভিন্ন জায়গায় জমি ক্রয় করেছেন কোটি টাকার। এই দুই যুবকের বয়স হবে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ বছর। তারা এত অল্প বয়সে এসব অবৈধ ব্যবসা করে উখিয়াসহ পুরো কুতুপালং রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া ২০২২ সালে সাইফুল ইসলাম ২৩ বছর বয়সে অবৈধ টাকায় নিজেকে পাপমুক্ত করতে ওমরা পালন করেন। এ অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে দুটি সিএনজিভর্তি সিগারেট ও ৫০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে পাচারকালে বিজিবি ধাওয়া করলে কামরিয়াবিল এসে জনগণের হাতে লুঠপাট হয়ে যায় প্রায় ৬০ লাখ টাকার অবৈধ মালামাল। এছাড়া ২০২৩ সালের আরো একটি ঘটনা স্বর্ণের বার মোটরসাইকেলযোগে পাচারকালে রেজুখাল ব্রিজে বিজিবির তল্লাশিতে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণের বারসহ এক পাচারকারীকে আটক করছিল বিজিবি। এসব পৃথক পৃথক ঘটনা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় ছবিসহ সংবাদ প্রচার হয়ছিল।
এসবের পর থেকে তারা সু-কৌশলে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন। সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি উত্তাল থাকায় প্রায় ৬ মাস ধরে দেশে বড় কোনো চালান না এলে এসব অবৈধ কালো টাকা সাদা করতে হাতে নিচ্ছেন নতুন নতুন দোকান ব্যবসা। সেখানে খাবার হোটেল, কসমেটিক, কাপড়সহ বিভিন্ন ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করছেন।
সম্প্রতি সিইডি প্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী অবৈধ কালো টাকার কোনো সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ক্রোক করার কথা থাকলেও তাদের দুজনকে এখনো নজরে আনতে পারেননি সিআইডির কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের দাবি, তারা প্রকাশ্যে এসব অবৈধ ব্যবসা করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসন বা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ইনভেস্টিগেশন করতে দেখা যায়নি। তারা এত অল্প বয়সে এত টাকার উৎস কী- জানতে চেয়ে দুদুকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জবাবদিহিতায় আনলে সব গোমর ফাঁস হয়ে আসবে। এছাড়া তাদের বিষয়ে কুতুপালং এলাকার লোকজনসহ প্রশাসনের অনেকেই অবগত। কিন্তু সবাই নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুতুপালংয়ের এক স্থানীয় যুবক জানান, সাইফুল মূলত সীমান্তবর্তী এলাকার ছেলে তার সাথে কানেকশন রয়েছে মিয়ানমারের বড় বড় সিন্ডিকেটের সাথে। সেখান থেকে তারা অবৈধ বিভিন্ন পণ্য এনে এইখানে ছোট বড় ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন। তারা মূলত নিজেরা এসব পাচার করেন না। তারা, স্বর্ণের বার, সিগারেট, অন্যান্য জিনিস গুনে বুঝে তাদের বিশ্বস্ত পাচারকারী ও ছোট ব্যবসায়ীদের তুলে দেন। আমি কিছুদিন তাদের সাথে ছিলাম। বর্তমানে বর্ডার বন্ধ থাকায় এসব ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে লিপ্ত হয়েছি।
স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, সাইফুল অবৈধ সিগারেট ব্যবসা করে সাধারণ মানুষ ছাড়া অনেক প্রশাসনের লোকজন ও জানে। এটা নতুন কিছু নয়। সাইফুল এবং তার দুলাভাই শাহা জালাল অবৈধ সিগারেট ব্যবসার সম্রাট বললেও চলে। চিহ্নিত অবৈধ চোরাইমাল ব্যবসায়ী।