সর্বজনীন পেনশন স্কিম
বাতিলের দাবিতে জাবি ও ঢাবিতে মানববন্ধন
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন-সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আমাদের জাবি প্রতিনিধি জানান, দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-সংলগ্ন সড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়ন ও কর্মচারী সমিতির ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। গত ১৩ মার্চ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়- চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে। মানববন্ধনে সরকারের পেনশন-সংক্রান্ত এমন বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আন্দোলনকারীরা। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মোসলেম উদ্দিন বলেন, আমরা সরকারের কাছে সবার জন্য পেনশন যেমন ছিল তেমনই বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আগামী ২৪ জুলাই থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের সরকারের গৃহীত সার্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের সুনাগরিক হিসেবে আমরা সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বকসী বলেন, সরকারের বৈষম্যমূলক এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। একটি রাষ্ট্রে একই শ্রেণির কর্মচারীর একটি নির্দিষ্ট অংশকে সুবিধাবঞ্চিত করতে পারে না। সরকারের কাছে আমরা বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।এছাড়া মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা দাবি বাস্তবায়িত না হলে আরো জোরালো আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে আমাদের ঢাবি প্রতিনিধি জানান, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবিতে গত ৬ মে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। এবার একই দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।
গত রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে (ভিসি চত্বর) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুল মোতালেব ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীরাও অংশ নেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা হোক; এক দেশে দুই নীতি মানি না মানব না; স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কালো আইন চাপিয়ে দেয়া, মানি না মানব না; বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই; সর্বজনীন পেনশন স্কিম মানি না মানব না; ৭৩ এর আদেশে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে- ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড লক্ষ্য করা যায়।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন-সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের কারণে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। একই বেতন স্কেলের আওতাধীন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ভিন্ন নীতি সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
তারা আরো বলেন, এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দুরভিসন্ধি রয়েছে কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। যে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় এসে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমাজও তার উন্নয়নযাত্রায় বিপুল উৎসাহ নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বিদ্যমান সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের পথে ঠেলে দেওয়ার পুরোনো কৌশল শুরু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। অনতিবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা ও অসন্তোষ লাঘব করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ম্যানেজার মো. কামরুল হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিজস্ব পরিচয় রয়েছে, নিজস্ব সিন্ডিকেট রয়েছে, সিনেট রয়েছে। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এটি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। অতএব, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কখনোই যায় না। আমরা আশা করি, আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুঃখের এই ভাষা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছবে এবং বৈষম্যমূলকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে। যদি তা না হয়, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ঠিকই জানে যে, কীভাবে দাবি আদায় করতে হয়। আমাদের দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সব ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
সভাপতির বক্তব্যে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পেনশন সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটি আমাদের জন্য নয়। যারা ১ জুলাই থেকে কাজে যোগদান করবেন তাদের জন্য। আমরা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি এবং এখানেই বছরের পর বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় হলো আমাদের প্রাণ, আমাদের চেতনা। আজকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা এখানে বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের চেতনায় আঘাত করা হবে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হবে।
তিনি বলেন, এই নিয়ম বাস্তবায়িত হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পার্থক্য থাকবে না। ‘প্রত্যয়’ নামে যে পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে, এটি অবশ্যই সর্বজনীন নয়। এটি গতানুগতিক ধারায় একটি গোষ্ঠীকে নিষ্পেষিত করার ষড়যন্ত্র মাত্র। এটি বাস্তবায়ন করা হলে কোনো মেধাবী লোক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতে আসবেন না। মেধাশূন্য হয়ে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অতএব, আমরা চাই, পেনশন-সংক্রান্ত এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।