কোরবানি ঈদের আগেই অস্থির মসলার বাজার

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

কোরবানি ঈদের আগেই বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মসলার বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কোরবানির ঈদ আসতে এখনও মাসখানেক বাকি থাকলেও মসলার বাজারে এমন অস্থিরতা সকলকে ভাবিয়ে তুলছে। কোরবানির ঈদে মসলার অপরিহার্য ব্যবহার জেনেই ব্যবসায়ীরা এমন কারসাজি করছেন বলে মনে করছেন ক্রেতাসাধারণ। তাদের ধারণা সামনে মসলার দাম আরো বাড়বে। এমনটি হলে বেশ বেকায়দাই পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি জিরা ৬৫০ টাকা, এলাচ ৩৯০০ টাকা, লবঙ্গ ১৩৬০ টাকা, দারুচিনি ৩৭৫ টাকা, গোলমরিচ ৮০০ টাকা এবং জয়ত্রি ২৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে জিরা, এলাচ ও লবঙ্গের মতো মসলার দাম প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা করে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নানা অজুহাতে কোরবানির আগেই মসলার বাজারে এমন অস্থিরতা। অথচ এসব মসলা আমদানি হয়েছে তিন থেকে চার মাস আগে। আর চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত আমদানি হওয়ায় এ মুহূর্তে বাজারে মসলার কোনো সংকট নেই বলে দাবি কাস্টমসের। ভারত থেকে আমদানি কম হওয়ার অজুহাতে গত দুমাস ধরেই দেশের বাজারে এলাচের দাম লাগামহীন। দুহাজার টাকা কেজি এলাচের দাম এসে ঠেকেছে চার হাজার টাকায়। এবার শুধু এলাচ নয়, অজুহাতের ওপর ভর করে জিরা, লবঙ্গ, দারুচিনি, গোলমরিচ এবং জয়ত্রির দাম ইছোমতো বাড়িয়ে দিয়েছেন পাইকারি বিক্রেতারা। বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল আজহার দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে, ততোই অস্থির হয়ে উঠছে মসলার বাজার। চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জের মেসার্স বেলাল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. বেলাল বলেন, পাইকারি বাজারে কেজিতে ৫-১২ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে জিরা ও গোলমরিচের। এছাড়া দাম বেড়েছে এলাচেরও, যা প্রতিনিয়তই ৫০ টাকা উঠানামা করছে। খাতুনগঞ্জের মেসার্স সায়েমা ট্রেডার্সের মালিক মো. ইফতেখার বলেন, ডলার সংকট ও দামের তারতম্যের কারণে মসলা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রতিটি মসলার দামই বেড়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২৪ হাজার ২৬৭ মেট্রিক টন এলাচ, ৪১ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন জিরা, ৩২ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন লবঙ্গ এবং ২৯ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন গোল মরিচ আমদানি হয়েছে। এটি গত বছরের এ সময়ে আমদানির তুলনায় অনেক বেশি। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, যত দ্রুত সম্ভব কাস্টমস থেকে পণ্য খালাস করা হচ্ছে। যাতে করে বাজারে কোনো ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয়। মূলত ভারত থেকে জিরা ও এলাচ, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও গুয়েতেমালা থেকে দেশে লবঙ্গ ও দারুচিনি আমদানি করা হয়।

এত দিন এসব দেশে উৎপাদন কম হওয়ার অজুহাত দেখালেও এখন তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়ে যাওয়া। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত জানান, খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা সঠিক রশিদ রাখেন না। এক মাস আগে অভিযানে আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি কেজি এলাচ ১৫ শতাংশ মুনাফাসহ বিক্রয়মূল্য হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। তখন একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছিলাম। এখনো আমাদের বাজার তদারকি চলমান। আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের তালিকা করছি। তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।

উল্লেখ্য, গত ৮ মে প্রতি ডলারের দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ১১০ টাকা। এদিকে প্রতিদিনই অস্থির হয়ে উঠছে মসলাপণ্য এলাচের বাজার। দেশে তিন ধরনের এলাচ আমদানি হয়। এর মধ্যে বড় দানার সবচেয়ে উন্নত এলাচ আসে ভুটান থেকে। মাঝারি সাইজের মোটামুটি ভালো মানের এলাচ আসে গুয়াতেমালা থেকে। এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকেও কিছু এলাচ আমদানি হয়। বর্তমানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ছোট দানার এলাচ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে। ১৫ দিন আগেও একই এলাচ বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ৫০০ টাকায়। বড় দানার এলাচের বর্তমান মূল্য প্রতি কেজি তিন হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৯০০ টাকা। এটি গত দেড় মাসে বেড়েছে কেজিতে ১ হাজার ১০০ টাকা।

মুরগি ও সবজির বাজারও চড়া

এদিকে চট্টগ্রামে মুরগি ও সবজির বাজার চড়া। কিছুদিন আগে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখি ঝড়ের কারণে সবজির সরবরাহ কমেছে। আর মাসখানেক ধরে চলা তাপপ্রবাহে খামারিদের মুরগি মারা যাওয়ায় বাজারে মুরগির সরবরাহও কমেছে। এতে বেড়েছে দাম। কয়েক দিনের ব্যবধানে এক লাফে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ২৫ টাকা পর্যন্ত। এতে বাজারে দাম বেড়ে গেছে সবজিরও। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে মুরগি, ডিম ও সবজির সরবরাহ কম থাকায় এগুলোর দাম বেড়েছে। বহদ্দারহাট বাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানান, কিছুদিন আগে তাপদাহ এরপর আবার কালবৈশাখী ঝড়, যার কারণে কৃষকের ক্ষেতের সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমেছে। মূলত এ কারণেই সবজির দাম আগের চেয়ে একটু বেড়েছে। কম। এ কারণে তিনটি নিত্যপণ্যেরই দাম বাড়তি। শুক্রবার নগরের চকবাজার, বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। চলতি সপ্তাহে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকায় উঠে যায়। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজি দরে। প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। তবে সাদা ডিম ডজনপ্রতি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। চকবাজারের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহ থেকে ব্রয়লার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এবার সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মূলত খামারে মুরগি কমে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে সব ধরনের সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

কিছুদিন ধরে বাজারে পেঁপে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। সেই পেঁপের দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, বেগুন মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, পটল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।