জবির নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্প

নড়বড়ে ভিত্তিতে গড়ে উঠছে প্রকৌশল ভবন

* রাতের আঁধারে পাইলিং * ২০-২৫ ফিট পাইলিং কম * ঠিকাদার-চিফ ইঞ্জিনিয়ারের স্বজনপ্রীতি

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাজেদুর রহমান, জবি

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পের কাজ চলছে। ৬ বছর ধরে চলমান এ প্রকল্পের নানা কাজে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে আসছে। নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের আওতায় চলছে ৫ তলা বিশিষ্ট প্রকৌশল ও প্লানিং দপ্তরের ভবন নির্মাণের কাজ। তবে রাতের অন্ধকারে অতি গোপনীয়তার মধ্যে ভবনের পাইলিং স্থাপন করা হচ্ছে। ৫৫ ফিটের জায়গায় ৩০-৩৫ ফিট পাইল স্থাপন করে দ্রুত কাজ শেষ করার চিত্র দেখা গেছে। এতে ভবনটির ভিত্তি থেকেই দুর্বলভাবে গড়ে উঠছে।

সরেজমিন নতুন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, নতুন ক্যাম্পাসের ৫ তলা প্রকৌশল ভবনের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এ ভবনের ভিত্তির জন্য ৫৫ ফিট কনক্রিটের পাইল তৈরি করা রয়েছে। সেগুলো হ্যামার দিয়ে মাটির গভীরে ঢোকানো হচ্ছে। তবে ৮০ ভাগেরও বেশি পাইল মাটির গভীরে ৫৫ ফিট ঢুকানো হচ্ছে না। পাইলের ৩০-৩৫ ফিট ঢুকিয়ে বাকিটা ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কাজ শুরুর দিকে তড়িঘড়ি করে রাতের অন্ধকারে ভবনের পাইলিং-এর কাজ করা হয়েছে। প্রতিটি পাইল কোনোটা ৩০ ফিট, কোনোটা ৩৫ ফিট ঢুকিয়ে বাকি অংশ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। প্রতিদিন যেখানে সারাদিন মিলে একটি হ্যামার ৩টা পাইল ঢুকাতে পারে। সেখানে ১০-১২টি পাইল ঢুকানোর কাজ শেষ করা হয়েছে। এমনটি ঘটলেও প্রথম দিকে প্রকৌশল দপ্তর কাজটি নিয়ে কিছুই বলেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কাজটি করছে ওমর ফারুক রুমি। ঠিকাদার রুমি ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার চাঁদপুরের একই জেলার বলে বহু বছর ধরেই সুবিধা পেয়ে আসছেন তিনি। কখনো নিজ কোম্পানি আবার কখনো অন্য কোম্পানির লাইসেন্স ভাড়া করে নতুন ক্যাম্পাসটির টেন্ডারের ৮০ ভাগ কাজই করছেন ঠিকাদার রুমি। এদিকে প্রকৌশল ভবনের পাইলিং ৫৫ ফিটের স্থানে প্রায় অর্ধেকই কম হওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে উঠছে।

এদিকে ভবনের এমন চিত্র সম্পর্কে জানার পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে তলব করেন এবং নতুন ক্যাম্পাস তদারকি কমিটিকে সরেজমিন করতে পাঠান। পরবর্তী সময়ে পাইল না ঢোকার চিত্রের সতত্য মিললে বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে মাটি পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ভবনের জন্য প্রায় সাড়ে ৩০০ পাইল স্থাপনের কথা থাকলেও ঘটনাটি জানার আগেই অধিকাংশ পাইল অর্ধেক ঢুকানো অবস্থায় স্থাপন করা হয়ে গেছে। ২২০টির মতো পাইল স্থাপন করা সম্পন্ন বলে জানা গেছে।

অনিয়ম করে ভবনের টেন্ডার : এদিকে টেন্ডারটির অফিসিয়াল ইস্টিমেট মূল্য ৫৬ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজার ৭০ টাকা। এ কাজের টেন্ডার আহ্বানে দুটি দরপত্র বিক্রি হয়। এরমধ্যে এনডিই ও কেবিএল নামক প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ৬১ কোটি ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৭ টাকায় কাজ করতে মূল্য দেয়। অন্যদিকে এসএসএল ও আরএস নামক দুইটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ৬১ কোটি ৮৯ লাখ ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা মূল্য দেয়। ৩৪ লাখ টাকা কম দিয়েও টেন্ডার পায়নি এনডিই-কেবিএল কোম্পানি। ইঞ্জিনিয়ার দপ্তর থেকে জানা যায়, কম রেট দেয়ায় নিয়মানুসারে টেন্ডার পাবার কথা থাকলেও তুচ্ছ কারণে এনডিই কোম্পানিকে বাদ দেয়া হয়। চিফ ইঞ্জিনিয়ার, পিডি ও সাবেক ট্রেজারারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠা টেন্ডার চক্র এসএসওল-আরএস প্রতিষ্ঠানকে দেয়। এ টেন্ডারটির কাজ করছে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের নিজ জেলার ঠিকাদার ওমর ফারুক রুমি।

ভবনের কাজ সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, পাইলগুলো ৫৫ ফিট দেওয়ার কথা থাকলেও নিচের মাটি শক্ত হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ ঢোকানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রথম দিকে ঠিকাদার আমাদের বিষয়টি অবগত করেনি। এটা অন্যায় হয়েছে তাদের। পরে আমরা জানার পর আবার সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) করিয়েছি। সে রিপোর্টেও নিচের মাটি শক্ত পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, এ প্রকল্পে দুটো টেন্ডার ড্রপ করা হয়েছিল। তবে যে কোম্পানিটি কম রেট দিয়েছিল, সে কোম্পানী সবগুলো নির্দেশনা পূরণ করতে না পারায় যে বেশি রেটে টেন্ডার ড্রপ করেছিল সে পেয়েছে।

ভবনটির কাজ করা ঠিকাদার ওমর ফারুক রুমি বলেন, ‘৩০ ফিট পাইলিংয়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। ডিপার্টমেন্টের নিয়ম অনুযায়ী ৫৫ ফিটের পাইলিং করা হচ্ছে। অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। আপনি চাইলে মেপে দেখতে পারেন।’

এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে কথা বলব। উপাচার্ষের সঙ্গেও আলাপ করব। প্রথমদিকে পাইল না ঢুকে থাকলে তো ঝুঁকিপূর্ণ থেকেই যায়। এটার করণীয় কি সে বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।