কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার লক্ষ্যে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা মজুদকরা বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-১৫। এ সময় ওই সংগঠনের শীর্ষ দুই কমান্ডারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল ভোর রাতে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ এর লাগোয়া লাল পাহাড় নামক স্থানে তাদের গড়া আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার এবং এসব গোলাবারুদ জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম। পরে আদালতের নির্দেশনায় সেনাবাহিনীর বোম ডিস্পোজাল টিম উদ্ধার করা গ্রেনেড, হাত বোমা নিষ্কৃয় করেছে। গ্রেপ্তার আরসা কমান্ডাররা হলেন- উখিয়ার ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দুল আকবরের ছেলে শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম (৩৮) ও ক্যাম্প ৮ ডব্লিউ’র মৃত মোহাম্মদ নুরের ছেলে মো. রিয়াজ (২৭)। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা তথ্যে র্যাব-১৫ জানতে পারে, মাস্টার সেলিম বর্তমানে ক্যাম্প এলাকায় আরসার প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তার নিয়ন্ত্রণে পুনরায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ হতে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করে চলছে তারা।
এরই ধারাবাহিকতায়, র্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল বুধবার ভোররাতে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান চালায়। অভিযানে আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম’সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি গ্রেনেড, তিনটি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, একটি বিদেশি রিভলবার, ৯ রাউন্ড নাইনএমএম পিস্তলের অ্যামুনিশন, একটি এলজি এবং তিনটি ১২ বোর কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ২০১৭ সালে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-১৫ এ বসবাস শুরু করে। মিয়ানমার থাকাকালীন সেখানকার জোন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ সময় আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবেও দুই মাস দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগ দেন।
আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন তিনি। অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকের ওপর পারদর্শী হওয়ায় তাকে ক্যাম্প-১৫ এর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পে আরসার নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ায় আরসার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব নেয়। পার্শ্ববর্তী দেশে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফলে লুটকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ বিভিন্ন মাধ্যম হতে সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুনরায় মারামারি, সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।
আর রিয়াজও ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বসবাস শুরু করে। ২০১৮ সালে মৌলভী ইব্রাহিমের মাধ্যমে আরসায় যোগদান এবং প্রাথমিকভাবে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করে। এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ আরসাবিরোধী সংগঠনের সদস্যদের গতিবিধি লক্ষ্য করতো। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমার ফিরে গিয়ে ৬ মাসের সামরিক বিভিন্ন বিষয়াদিসহ মাইন, বোমা, হাত বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। সম্প্রতি আবার বাংলাদেশে ঢুকে মাস্টার সলিমের অন্যতম সহযোগী হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। তার বিরুদ্ধে ১টি হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া যায়। তাদেরকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দ্রব্যাদি অনিরাপদ, ঝুঁকিপূর্ণ ও সংবেদনশীল হওয়ায় বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কক্সবাজার হতে অনুমতি গ্রহণপূর্বক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কর্তৃক নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।