ভয়াবহ মাদক ইয়াবা, ক্রিস্ট মেথ আইসের পর এবার মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে জার্মানের তৈরি জি থ্রি রাইফেল, রকেট সেলের মতো ভারি আগ্নেয়াস্ত্র। র্যাবের অভিযানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড় থেকে রকেট সেল ও গ্রেনেড উদ্ধারের পর এবার কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে জার্মানের তৈরি জি থ্রি রাইফেল, শুটারগান ও ৯২ রাউন্ড রাইফেলের গুলি। টানা ৭২ ঘণ্টার অভিযানে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তাররা সংঘবদ্ধ অস্ত্র ব্যবসায়ী। যারা মিয়ানমার থেকে অস্ত্র এনে বাংলাদেশের অপরাধি চক্রের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে।
গতকাল বৃস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহাফুজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উখিয়ার মাদারবুনিয়া এলাকার মো. ছৈয়দের ছেলে মোস্তাক আহম্মদ, মহেশখালীর মাঝের ডেইল এলাকার আনজু মিয়ার ছেলে রবিউল আলম, মাদারবুনিয়া এলাকার মৃত নুর নবীর ছেলে কাশেম প্রকাশ মনিয়া, মোস্তাক আহম্মদের ছেলে লতিফা আক্তার ও মহেশখালীর নতুন বাজার এলাকার মৃত আবুল হাশেমের ছেলে বেল্লাল হোসেন।
উদ্ধার করা হয়েছে, একটি জার্মান তৈরি জি থ্রি রাইফেল, একটি ম্যাগাজিন, দুটি ওয়ান শুটার গান ও ৯২ রাউন্ড গুলি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, টানা ৭২ ঘণ্টা অভিযানে উখিয়া ও টেকনাফ থেকে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং ৫ জন অস্ত্র ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের কাছে গোপন সংবাদ ছিল দুর্ধর্ষ ডাকাত ও অস্ত্র ব্যবসায়ী পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে এসে অপরাধী চক্রের নিকট হস্তান্তরের জন্য সংঘবদ্ধ হয়েছে। যার সূত্র ধরে প্রথমে উখিয়ার মাদারবুনিয়া এলাকায় গহীন পাহাড়ে দুর্ধর্ষ ডাকাত মোস্তাকের বাড়ি থেকে মোস্তাক, রবি আলম, কাশেম এবং মোস্তাকের স্ত্রীকে দুটি ওয়ান শুটারগান (এলজি), ৭৭ রাউন্ড গুলি এবং ২৪টি গুলির খোসাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বেলাল টেকনাফ এলাকা থেকে পালিয়ে তার নিজ এলাকা মহেশখালী যাওয়ার কালে গ্রেপ্তার করা হয়। বেলালের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফের শাপলাপুর এলাকায় সমুদ্র তীরবর্তী ঝাউবাগানের মধ্যে বালুর নিচে রাখা একটি বিদেশি জি থ্রি রাইফেল, একটি ম্যাগাজিন ও ১৫ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, ডাকাত মোস্তাক একাধিক ডাকাতি, অস্ত্র, মাদক মামলার আসামি এবং তার বিরুদ্ধে ৪টি গ্রেফতারি পরোয়ানা মুলতবি রয়েছে। অস্ত্র ব্যবসায়ী রবি আলমের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে। এ ব্যাপারে উখিয়া ও টেকনাফ থানায় অস্ত্র আইনে নিয়মিত দুটি মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের অপর আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুরো অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মো. রাসেল, টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি, উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন। প্রসঙ্গত, এর আগে গত বুধবার ভোর ৫টা থেকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন লাল পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আস্তানার সন্ধান পায় র্যাব। যেখানে টানা ৬ ঘণ্টার অভিযানে অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেলসহ দুই সন্ত্রাসীকে আটক করেছে র্যাব।