ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শ্রীনগর তালতলা খালের দুইপাড় দখলের মহোৎসব

খাল নয় যেন ময়লার ভাগাড়
শ্রীনগর তালতলা খালের দুইপাড় দখলের মহোৎসব

দখল আর দূষণে আবর্জনার আধার আগাছা, বর্জ্য ও কচুরিপানায় রুদ্ধশ্বাসে নিষ্প্রাণ হয়ে উঠেছে শ্রীনগর-তালতলা খাল। এক সময় জলতরঙ্গের তালে তালে উল্লাসে মেতে চলা গৌরবোজ্জ্বল এই খালটি তার যৌবন হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। শ্রীনগর সরকারী খাল হতে শ্রীনগর মুন্সীগঞ্জ রোডের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সিরাজদিখান উপজেলার তালতলা বাজারের পূর্ব-উত্তর পাশে ইছামতী নদীতে মিশে যাওয়া খালের পুরো অংশজুড়ে ময়লা ও বর্জ্য ফেলে পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দিনদিন ময়লার ভাগাড়ে পরিণতি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই খালটি। খালে পানি না থাকায় দুই উপজেলার প্রায়ই ৭-৮টি ইউনিয়নের কৃষকরা কৃষিকাজে সেচ সমস্যায় ভুকছে। দখল, দূষণ আর খননের অভাবে খালটি হারাতে যাচ্ছে তার চিরাচরিত ঐতিহ্য। বছরে পর বছর উজান থেকে আসা পলি জমে আর স্থানীয় দখলদারদের কারণে খালটিতে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শুকনো মৌসুমেও খালটিতে পানি থাকে না, খালটির দুটি উপজেলার হাজার হাজার কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করত। কিন্তু পানি না থাকায় বেশ বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা। বর্তমানে খালে জোয়ার ভাটার আগমন নেই, তবে ভরা বর্ষায় পানি থাকলেও ময়লা-আবর্জনা এবং অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা নিচু ব্রিজের কারণে কোনো নৌকা বা ট্রলার চলাচল করতে পারে না। খালটি খনন না করা আর প্রশাসনের নজরদারির অভাবে দখল দূষণের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই খালটি এখন ময়লা ফেলার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। একের পর এক সরকারের পালাবদল হলেও ঐতিহ্যবাহী তালতলা শ্রীনগর খালটিকে খনন করে সচল রাখার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

সরেজমিন দেখা যায়, তালতলা সরকারি ডাকবাংলো সংলগ্ন ইছামতী নদী থেকে খালটি উৎপত্তি হয়ে শ্রীনগর বাজারে গিয়ে মিলিত হয়েছে। দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘের এই খালটি এখন অচলাবস্থা। খালটিতে প্রায় ১৫টি ব্রিজ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘতম এই খালটি দিয়ে নৌযানে করে স্থানীয় কৃষকদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ কালভার্ট আর বিভিন্ন স্থানে বাঁশের সাঁকোর কারণে ভরা বর্ষায় ট্রলার চলাচল সম্ভব না। এছাড়া খালে একশ্রেণির মানুষ খালে ময়লা বর্জ্য ফেলে করা হয়েছে পরিবেশ দূষণ। কচুরিপানায় ভরে যাচ্ছে। কোন প্রকার নিয়মনীতি মানছে না ওই শ্রেণির মানুষগুলো। তালতলা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত খালের দুই পাড়ে বিভিন্ন স্থানে দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। খালটির বিভিন্ন স্থানে গতিপথ বন্ধ করে শত শত অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে করে খাল দিয়ে পানি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে খালটি কৃষকদের তেমন উপকারে আসছে না বলেও জানান স্থানীয়রা। খালটি দখলমুক্ত করে খনন করে সচলের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহলের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শরীফুল আলম তানভীর জানান, খাল খননের বিষয়টি পানি উন্নয়নে বোর্ডের । তবে দখল এবং দূষণের বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে নিয়ে আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করব।

তিনি আরো বলেন, ঐতিহ্যবাহী খালটি যেন সচল থাকে এবং পানির প্রবাহ যেন সঠিক থাকে সেই জন্যে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় খালটি দখল এবং দূষণের বিষয় নিয়ে আলাপ করে দখলমুক্ত করার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও তিনি জানান।

খননের বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ জেলা পানী উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্ত্তী দৈনিক মুন্সীগঞ্জের খবরকে বলেন, তালতলা শ্রীনগর খালটি খননের পরিকল্পনা আমাদের আছে। তিনি জানান দেশের ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে তালতলা শ্রীনগর খাল খননের জন্য এরইমধ্যে প্রস্তাব পাঠান হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত