ঢাকা ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জেলা পরিষদ-বিএমডি দ্বন্দ্ব

বন্ধ হয়ে গেছে মরা গাছ অপসারণ কার্যক্রম

বন্ধ হয়ে গেছে মরা গাছ অপসারণ কার্যক্রম

দীর্ঘদিন ধরে সড়কের পাশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণ করছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ। আমনুরা-নাচোল সড়কের দুই পাশের গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে জেলা পরিষদ কাটলেও বাঁধ সেধেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। বিএমডিএ’র দাবি- ওই গাছগুলো তাদেরই। দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাছযুদ্ধে এখন মরা গাছগুলোর অপসারণ কার্যক্রম বন্ধ আছে। এতেই ওই ক্ষুব্ধ আমনুরা এলাকার সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন- ৩ বছর আগে আমনুরা শুকারদিঘী এলাকায় আনোয়ারা নামে এক গৃহবধূূর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর থেকেই সড়কের পাশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণের দাবি ওঠে। দীর্ঘদিন পর অপসারণের কাজ শুরু হলে স্থানীয়দের মাঝেমধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ গেল বছরের নভেম্বরে সড়কের পাশে থাকা অপসারণযোগ্য গাছ নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর জেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির ৯ম সভায় গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে নিলাম করার সিদ্ধান্ত হয়। বিধি মোতাবেক সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিলাম করা হয় আমনুরা এলাকার সড়কের পাশে থাকা ২৫৮টি মরা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ। গাছের মূল্য নির্ধারণ করে বন বিভাগ। সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর চারটি গ্রুপে ২৩টি দরপত্র দাখিল হয়। সর্বোচ্চ দরদাতার সঙ্গে চুক্তিপত্র সম্পাদনের পর গাছ অপসারণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। এরপরই গাছ অপসারণ শুরু করে ঠিকাদার। তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গাছগুলো তারা লাগিয়েছে দাবি করে নিলাম প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বিএমডিএ’র ‘অযৌক্তিক’ দাবির কারণে সমালোচিত হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা পরিষদের গাছ নিলাম সংক্রান্ত কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিধি অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ নিলাম করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই সড়কে একটি ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এ জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ গাছগুলো কেটে নিতে জেলা পরিষদকে অনুরোধ করেছিল। নিলাম প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বিষয়টি অবগত। তখন তারা কোনো প্রশ্ন তোলেনি। গাছ অপসারণ শুরু হলেই হঠাৎ করে গাছগুলো নিজেদের দাবি করে, কাটা বন্ধ রাখতে জেলা পরিষদকে চিঠি দেয় বিএমডিএ।

বিএমডিএ জানায়- ১৯৮৯-৯০ সালে সড়কের ধারে গাছগুলো তারা রোপণ করেছে। এ নিয়ে জেলা পরিষদ ও বিএমডিএ’র মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব।

জেলা পরিষদের গাছ নিলাম প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্মকর্তারা জানান- গাছগুলো তারা রোপণ করেছেন, এমন দাবি করলেও তাদের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি বিএমডিএ। তবে বিএমডিএ হঠাৎ করেই স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদকে বিতর্কিত করে তুলেছে। এর পেছনে রয়েছে বিএমডিএর ছত্রছায়ায় থাকা একটি গাছখেকো সিন্ডিকেট। জেলা পরিষদের জায়গায় থাকা অনেক গাছ বিক্রি করেছে বিএমডিএ। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী জেলা পরিষদের হিস্যা পরিশোধ করেনি সংস্থাটি।

আমনুরা-কেন্দুল এলাকার বাসিন্দারা জানান, ৩০ বছর আগে লাগানো সড়কের গাছগুলো প্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ঝড়-বৃষ্টিতে ডালপালা পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি সেই হতাহতের পর নিরাপদে চলাচল করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বিএমএডিএ গাছকাটা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন কালবৈশাখি ও হালকা বাতাস হলেই ভেঙে পড়ছে ডালপালা। অবশিষ্ট গাছগুলো দ্রুত অপসারণ না হলে আবারও যে কোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণঘাতীর মতো ঘটনা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন বলেন, ভূমি মালিক জেলা পরিষদ। তাই গাছের মালিকও তারা। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী বন বিভাগকে দিয়ে গাছের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। জেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির ৯ম সভায় বিধি মোতাবেক গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে নিলাম করার সিদ্ধান্তের পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সর্বোচ্চ দরদাতার সঙ্গে চুক্তিপত্র সম্পাদনের পর গাছ অপসারণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় জেলা পরিষদের কোনো ত্রুটি নেয়।

আফাজ উদ্দিন আরো বলেন, বিএমডিএ গাছের মালিকানা দাবি করলে, তাদের যথাযথ প্রমাণ দিতে বলা হয়। কিন্তু গাছগুলো তারা রোপণ করেছে, এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। অকারণে জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অপপ্রচার চালিয়েছে বিএমডিএ।

এ বিষয়ে বিএমডিএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আল মামুন রশীদ বলেন, ১৯৮৯-৯০ সালে সড়কের ধারে গাছগুলো রোপণ করে বিএমডিএ। কিন্তু তাদের না জানিয়েই ওই গাছ বিক্রি করে দেয় জেলা পরিষদ। গাছগুলো তাদের রোপণ করা এর কোনো প্রমাণ আছে কি না, এমন প্রশ্নে বিএমডিএ এই কর্মকর্তা বলছেন, দুই দপ্তরের চুক্তি হয়েছে। ওই কাগজই আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত