মিলছে না জেলা প্রশাসনের অনুমতি
কোরবানির পশুর হাট ইজারার দরপত্র আহ্বান করতে পারছে না চসিক
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তামীম রহমান, চট্টগ্রাম
পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। সে হিসাবে হাট প্রস্তুতির সময় কিন্তু বেশি নেই। এরই মধ্যে হাট ইজারাদাররা দরপত্রের মাধ্যমে হাট পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে জেলা প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পাওয়ায় অস্থায়ী হাট বসাতে ইজারাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করতে পারছে না চসিক। পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ১ থেকে ১০ জিলহজ্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় নগরে কোরবানির পশুর স্থায়ী-অস্থায়ী হাট বসে। এবারও চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুন থেকে হাট বসার কথা। ওই হিসাবে মাঝখানে বাকি আছে আর মাত্র ২০ দিন। অবশ্য প্রাথমিকভাবে ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় চসিক।
জানা যায়, প্রস্তাবিত এসব অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে গত মাসে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করে সংস্থাটি। চসিকের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের কাছে হাটগুলোর বিষয়ে মতামত চেয়ে গত ৫ মে চিঠি দেয়। তবে প্রস্তাবিত ৯টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের দুটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে নগর পুলিশ একটি এবং জেলা পুলিশ একটি হাট নিয়ে আপত্তি জানিয়ে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনে চিঠি দেয়। আপত্তি থাকা প্রস্তাবিত অস্থায়ী পশুর হাট দুটি হচ্ছে ১নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের চৌধুরীহাটস্থ অস্থায়ী পশুর হাট এবং ৩৮নং ওয়ার্ডস্থ সল্টগোলা রেলক্রসিং-সংলগ্ন পশুর বাজার। এছাড়া চসিকের প্রস্তাবিত বাকি সাতটি বাজার বসানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে বলে জেলা প্রশাসনকে জানায় সিএমপি। আপত্তি না দেয়া পশুর বাজারগুলো হচ্ছে ৩নং ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, ৬নং ওয়ার্ডস্থ কর্ণফুলী গরু বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট), ২৬নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন মহেশখালের দুই পাড়স্থ খালি জায়গা, ৩৯ নং ওয়ার্ডের আউটার রিং রোড, সিডিএ, বালুর মাঠ, ৪০ নং ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, ৪০নং ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ এবং ৪১নং ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ- অর্থাৎ এই সাতটি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো যাবে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, এবার সাতটি অস্থায়ী হাটের পাশাপাশি তিনটি স্থায়ী পশুর হাটেও চসিকের ব্যবস্থাপনায় কোরবানির পশু বিকিকিনি চলবে। স্থায়ী পশুর হাটগুলো হচ্ছে- সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সল্টগোলা রেলক্রসিং-সংলগ্ন পশুর বাজার নিয়ে সিএমপির স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিবেদনে বলা হয়, সল্টগোলা রেলক্রসিং বন্দর এলাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম স্থান। পশুর বাজারের জন্য প্রস্তাবিত জায়গাটিতে পশু বাজার বসানোর মতো স্থান নেই। ওই স্থানে একটি কবরস্থান আছে। পাশাপাশি ওই স্থানটি অস্থায়ী গ্যারেজ এবং স্থাপনা দ্বারা পরিপূর্ণ। বন্দরের যানবাহন, কাভার্ডভ্যান, লং ভেহিকেল, খোলা ট্রাক উক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। পশুর বাজার বসানোর মতো যথেষ্ট উন্মুক্ত স্থান না থাকায় বাজারের প্রভাব মূল রাস্তাসহ বন্দরের বিভিন্ন গেট যেমন লং ভেহিকেল গেট, ৫নং গেট ও সিপিএআর গেটে পড়বে। এতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটবে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সিএমপি জেলা প্রশাসনকে জানায়, সল্টগোলা রেলক্রসিং-সংলগ্ন এলাকায় কোরবানির পশুর বাজার বসানোর অনুমতি প্রদান করা সমীচীন হবে না।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পশুর হাট ৯টির মধ্যে সাতটি বসানো হবে। সিএমপি একটি হাট নিয়ে আপত্তি দিয়েছে। জেলা পুলিশও একটি নিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছে। হাট বসানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে কি না- জানতে চাইলে বলেন, ডিসি অফিসে পেন্ডিং আছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নগরে চসিকের ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী-অস্থায়ী ১১টি পশুর হাট বসে। এর মধ্যে সাতটি অস্থায়ী এবং তিনটি স্থায়ী হাট ছিল। এছাড়া গতবার প্রথম হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরীহাটের শতবর্ষী কোরবানির পশুর অস্থায়ী বাজার থেকে খাস আদায়ের মাধ্যমে হাসিল আদায় করে চসিক। বিষয়টি নিয়ে যদিও আপত্তি ছিল স্থানীয়দের। এবার প্রথমবারের মতো বাজারটিতে ইজারাদার নিয়োগের উদ্যোগ নিলেও হাটটি বসা নিয়ে আপত্তি আছে জেলা পুলিশের। এদিকে কোরবানি ঈদ যত ঘনিয়ে আসে অলিগলিতে তত অস্থায়ী পশুর হাটের সংখ্যা বাড়ে। স্থায়ী-অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট শুরু না হলেও অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি, উন্মুক্ত মাঠ, সড়কের পাশসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বসানো হয় অস্থায়ী পশুর হাট। এ নিয়ে হাট ইজারা নিতে আগ্রহীরা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তারা কোটি টাকা দিয়ে হাট ইজারা নেন ভালো আর্থিক লাভের আশায়। কিন্তু অলিগলিতে এভাবে পশুর হাট বসার কারণে তাদের আকাঙ্ক্ষিত অনেক ক্রেতা হাট থেকে পশু না কিনে এসব অলিগলি থেকে পশু ক্রয় করেন। ফলে মানুষের হাটে এসে পশু কেনার প্রবণতা কমে যায়। হাটে ক্রেতাসমাগম না হলে আমরা ভালো বিক্রির আশা কেমনে করব? এতে করে ইজারাদাররা আর্থিকভাবে লোকসানের আশঙ্কা করছেন।