শিক্ষক-প্রশাসনের দ্বন্দ্বে ক্ষতির মুখে শিক্ষার্থীরা
৫ বিভাগের ৮টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত, সেশনজটের শঙ্কা
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নজরুল ইসলাম দুলাল, কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বন্দ্বের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে ক্যাম্পাস। দ্বন্দ্বের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় টানা বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। এতে পাঁচটি বিভাগের অন্তত আটটি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এছাড়া ৭টি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তাবিত রুটিন প্রকাশ স্থগিত হয়ে আছে। এসব কারণে অনেকটা অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে এই অচলাবস্থা নিরসনে দুই পক্ষই আগ্রহের কথা বললেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউই। এতে দিন দিন সেশনজটের শঙ্কা বাড়ছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। শুরুতে গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদে জ্যেষ্ঠদের পাশ কাটিয়ে কনিষ্ঠ শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেওয়াসহ নানা অভিযোগে প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন অন্তত ১৯ জন শিক্ষক। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর ভিসির কক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কিছু দাবি দাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে দুইজন কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচার দাবিতে তিন দফা ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি সাত দফা দাবি জানিয়ে আসছিল শিক্ষক সমিতি। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষকরা। গত ২৮ এপ্রিল শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে ফের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এর পর থেকে শিক্ষক সমিতি উপাচার্য ও ট্রেজারারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এদিকে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অন্যদিকে শিক্ষক-প্রশাসনের দ্বন্দ্বের জেরে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা শিক্ষক সমিতি কেউই সাড়া দেয়নি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে নেওয়া যায়নি পাঁচ বিভাগের ৮টি পরীক্ষা। এগুলো হলো- অর্থনীতি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এবং মার্কেটিং বিভাগ। আরও ৭টি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার রুটিন প্রস্তুত থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ না হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। এসব বিষয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, এমনিতেই করোনার কারণে এক বছর পিছিয়ে আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগ। বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও প্রশাসনের দ্বন্দ্বে ক্ষতির মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা শিগগির এ অবস্থার সুরাহা দাবি করেন।
শিক্ষার্থীদের সেশনজটের বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের জানান, শিক্ষকরা আজ অস্তিত্ব সংকটে দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীরাও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার জন্য একাধিকবার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু উপাচার্য আমাদের কথা শুনছেন না।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সমস্যা নিরসনে দুইটা তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আশা করি শিগগির ক্যাম্পাস খুলে যাবে। আর খোলার পরে কতদিন ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল তার উপর ভিত্তি করে আমরা রিকোভারি প্ল্যান করব।