২৬ মে থেকে আন্দোলনে নামছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

সার্বজনীন পেনশন-সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সুপারগ্রেড কার্যকর এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ২৫ মে এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ২৬ মে থেকে আন্দোলনে নামবেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা এ তথ্য জানান। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে আগামী ২৬ মে সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকরা একযোগে সকাল সাড়ে ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন। পরীক্ষাসমূহ চলমান থাকবে। এরপর ২৮ মে সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালসমূহের শিক্ষকরা একযোগে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন। পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে আগামী ৪ জুন সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে ওই দিনে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া পেনশন স্কিম বাতিল না করা হলে প্রথমে তিন দফায় আন্দোলন ও পরবর্তীতে বড় ধরনের আন্দোলনের কথা জানান। তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা ১ জুলাইয়ের আগে যোগদানকৃত এবং তার পরে যোগদানকৃতদের মধ্যে দুটি শ্রেণির জন্ম দেবে। একই কর্মক্ষেত্রে অবস্থানরত সহকর্মীদের মধ্যে এই বিভাজন শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলে সেটিও নতুন নিয়োগের ভিত্তিতে হয়। এই ব্যবস্থা সরকারি অন্যান্য চাকরিজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি করবে, যা সংবিধানের সমতার নীতির পরিপন্থি। বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন বাবদ কোনো অর্থ কর্তন করা হয় না। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা ৫ হাজার টাকা (যেটি সর্বনিম্ন) হারে টাকা কর্তন করার বিধান রয়েছে। অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে আনুতোষিক শূন্য। বিদ্যমান পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হন। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে পেনশনারের মৃত্যু হলে নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্তি হওয়া পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্ত হবেন। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনের ওপর বৎসরিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় অর্জিত ছুটি নগদায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রস্তাবিত স্কিমে সে সুবিধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ বছর। প্রত্যয় স্কিমে অবসরকালীন বয়স স্থির করা হয়েছে ৬০ বছর। তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সালে ৮ম জাতীয় বেতন স্কেলে শিক্ষকদের অবনমন করা হয়েছিল। সে সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিষয়টির সুরাহা হয়। সেই আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের তৎকালীন নেতৃবৃন্দকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছিল। আজও সে বিষয়টি কার্যকর করা হয়নি। সেটি অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রদানের দাবি দীর্ঘদিনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা মেধাবীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে পেশাগত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তনের দাবি জানান তিনি। একটি মহল নিজেদের স্বার্থ ঠিক রেখে এই প্রত্যয় স্কিম চালুর জন্য জোর দিচ্ছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী যেদিন সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন সেদিন এই ‘প্রত্যয়’ স্কিমটি ছিল না। হঠাৎ করেই একটি মহল নিজেদের সুযোগ সুবিধা অক্ষুণ্ণ রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উপর এ ধরনের একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।