পাহাড়ে অপহরণ বাণিজ্য ঠেকাতেই পুলিশি থাবা অব্যাহত রয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় গত দেড় মাসে মোরশেদণ্ডবদরুজ গ্রুপের প্রধান ডাকাত মোরশেদসহ সাতজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে চারজন একটি মামলায় এবং অন্যজন তিনটি মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি দুইজনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মো. রাসেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ২১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত টেকনাফের হ্নীলা, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন থেকে ১৫ জনকে অপহরণ করা হয়। পুলিশের অভিযান চালিয়ে অপহৃতদের উদ্ধারের ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুইজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এবার পরপরই তথ্য পাওয়া যায় টেকনাফের পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণকারী চক্রের ১৫ জনের একটি বাহিনী রয়েছে। আর সেই বাহিনীর প্রধান মোরশেদ। এরপর থেকে মোরশেদকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা শুরু করে। এর জের ধরেই পুলিশ মোরশেদকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরো জানান, মোরশেদ গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণ শূন্যের কোঠায় চলে আসবে।
টেকনাফ মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে টেকনাফ-উখিয়ার পাহাড়ি এলাকায় ডাকাতদল বেপরোয়া অপরাধ কাণ্ড ঘটাচ্ছিল। তাদের রদ করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মো. রাসেলের দিকনির্দেশনায় পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার ভোরে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালী পাহাড়ি এলাকার আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বাহাড়ছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. দস্তগীর হোসাইনের নেতৃত্বে পুলিশ মোরশেদ বাহিনীর প্রধান মোরশেদকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এ সময় তার দেখানো মতে শীলখালী পাহাড়ের পাদদেশে তার ঘরে লোকানো অবস্থা হতে দুইটি দেশীয় তৈরি অস্ত্র ও এক রাউন্ড তাজা গুলি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মোরশেদ আলম (২৩) টেকনাফের বাহারছড়া এলাকার মৃত নুরুল কবিরের ছেলে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাহাড়ছড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. দস্তগীর হোসাইন বলেন, অপহরণ রোধের পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার ভোরে অস্ত্রসহ মোরশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গেল দেড় মাসে অপহরণে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি মামলায় চারজন এবং তিন মামলায় একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। গ্রেপ্তার মোরশেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, অপহরণসহ আটটি মামলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ২ মে পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২৪ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৬ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের পরিবারের তথ্য বলছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫৩ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।