ঈদগাঁও উপজেলার প্রথম নির্বাচন

সহিংসতায় যুবক খুন বাড়িঘর ভাঙচুর

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন ছিল গতকাল। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর ঘণ্টা কয়েক সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চললেও বেলা বাড়ার সাথে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পোকখালী, জালালাবাদ, ঈদগাঁও’র বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধার সৃষ্টি করে প্রভাবশালী এক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। এমন খবর পেয়ে মধ্যম পোকখালী কেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী সামসুল আলম। এরপর উপজেলাজুড়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তালেবের পক্ষে প্রভাব বিস্তার ও বহিরাগত লোকজন কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে নিজের এজেন্ট বের করে দেয়ার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম আকবর। এ সময় কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক তার সাথে সড়কে অবস্থান নেয়। ফলে ঘণ্টাখানেক সময় মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন দুই পাশ দিয়ে আসা যানবাহনের যাত্রীরা। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে অবরোধকারীদের তুলে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর পশ্চিম পোকখালী মালমুরাপাড়া এলাকার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণকেন্দ্রিক সহিংসতায় একজনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্থানীয় মৌলভী মুহাম্মদ আলম নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে নিহত ছফুর আলমের বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। নিহত ছফুর আলম (৩৫) পশ্চিম পোকখালীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মালমুরাপাড়ার মৃত নমিউদ্দিনের ছেলে। তিনি ওই কেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের এজেন্ট ছিলেন। প্রার্থী সামসুল আলমের আত্মীয়ও হন তিনি। কিন্তু টেলিফোন প্রতীকের সমর্থকরা দাবি করেছেন ছফুর আলম তাদের কর্মী। পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পোকখালী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জানান, নির্বাচনি সহিংসতায় অন্য প্রার্থীর লোকজন বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় লুটতরাজ চালানো হয়। বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ছফুর আলমকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেকোনো সময় আরো সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রে টেলিফোন ও মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে টেলিফোন প্রতীকের কর্মী ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকশ লোক দরগাহপাড়া এলাকায় গিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। এ ধরনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

হামলায় ভাদিতলার ইলিয়াসের ছেলে হেলাল উদ্দিন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকজন নারীও আহত হন বলে প্রকাশ পায়। নির্বাচনি সহিংসতায় ঈদগাঁওতে মৃত্যু ও আহতের বিষয়ে জানতে ঈদগাঁও, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে, মরদেহ আনা ঈদগাহ মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের কর্মকর্তা দেবজিত গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনা কেন্দ্রের বাইরের। আমরা নিরাপত্তা জোরদার করছি। ঈদগাঁও থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, নির্বাচনি সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, এটি কেন্দ্রের বাইরে। বাকি সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে কেউ অবহিত করেনি। সাধারণ ভোটাররা বলেন, ঈদগাঁও উপজেলায় যেহেতু প্রথম নির্বাচন সেহেতু আমাদের কামনা ছিল সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচন। কিন্তু এভাবে মৃত্যু এবং ঘরবাড়িতে হামলার মতো ঘটনা দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হবে সেটা কল্পনাও করিনি। একটি কলঙ্কিত ইতিহাসের অংশ হয়েছে ঈদগাঁও’র প্রথম উপজেলা নির্বাচন। ঈদগাঁও, ইসলামপুর, পোকখালী, ইসলামাবাদ ও জালালাবাদ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৬০। যেখানে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৪৮ ও মহিলা ভোটার ৪০ হাজার ২১২ জন। উপজেলা নির্বাচনে ৩৬টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ২৬৮টি। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।