চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রাম। গ্রামে জাকির অ্যান্ড ব্রাদার্স অ্যাগ্রো ফার্ম হ্যাচারি গড়ে তুলেছেন জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এই খামার থেকেই আনুষঙ্গিক ৮ লাখ টাকা খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে জাকির হোসেনের লাভ থাকে প্রায় ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। জানা যায়, খামার থেকে প্রতিদিন ৮-৯ হাজারের বেশি ডিম সংগ্রহ করেন জাকির। যা দিয়ে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ডিমের চাহিদা মেটানো হয়। প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকাসহ মাসে ১৮ লাখ টাকা আয় হয় তার। যার মধ্যে লাভ হয় ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি। জাকির হোসেনের গল্পটা শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে। মাত্র ১৬০০ টাকায় ১৫০টি হাঁস নিয়ে খামারটির যাত্রা শুরু করেন তিনি। ১৭ বছর পর আজ সেই খামারটি ২৫০ বিঘার একটি বড় খামারে রূপ নিয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি হাঁস। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন ভেড়ার খামার। সেই খামারেও রয়েছে ৮০টির মতো ভেড়া। এর সঙ্গে রয়েছে মাছের চাষ। সফল খামারি হিসেবে জাকির হোসেন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার। এছাড়া হাঁসের মাংস বিক্রি করে মাসে আয় হয় আরও লাখ টাকা। যা থেকে মাসে হাঁসের খাবার, কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক ৮ লাখ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ প্রতি মাসে জাকির হোসেনের লাভ থাকে প্রায় ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। শুনতে স্বপ্নের মতো মনে হলেও এটাই বাস্তব। শুধু ডিম উৎপাদন নয়, বর্তমানে খামারটিতে ১৯টি হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর ইনকিউবেটর মেশিন রয়েছে। এসব ইনকিউবেটর থেকে প্রতি মাসে ২৯ হাজার বাচ্চা ফোটানো যায়। খামারে ডিম ও মাংসের জন্য দুই ধরনের হাঁস পালন করা হয়। সেখানে বর্তমানে ১২ হাজার হাঁসের জন্য কয়েক বিঘা জমির ওপর ১২টি শেড করা হয়েছে। খামারটি দেখাশোনার জন্য ২৪ জন কর্মী রয়েছেন। খামারের ম্যানেজার ইয়াছিন শেখ জানান, খামারটিতে সাত বছর আগে চাকরি নেন তিনি। সে সময় খামারটি এতো বড় ছিল না। ধীরে ধীরে খামার বড় করা হয়েছে। মূলত এখানে হাঁস ও মাছ চাষ করা হয়। বাচ্চা ফোটা থেকে শুরু করে বড় করা হয় এখানেই। আবার বাচ্চাও আমরা বিক্রি করে থাকি। চার মাস বয়স থেকেই হাঁস ডিম দেওয়া শুরু করে। একটি হাঁস বছরে ২০০-২৫০টি ডিম দিয়ে থাকে। প্রতিটি ডিম সাত থেকে সাড়ে সাত টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
তিনি বলেন, খামারটিতে বর্তমানে হাঁসের পাশাপাশি টার্কি মুরগি, কোয়েল পাখি, ছাগল, ভেড়া ও মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও রয়েছে। খামারটিতে প্রায় ৩৫-৪০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। খামারের কর্মী মাছুরা খাতুন জানান, খামারের প্রতিটি শেড থেকে ডিম তোলেন তিনি। বেতনের টাকায় সন্তানদের লেখাপড়াসহ সংসারও চলে। প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে হাঁসের খামার দেখতে আসেন অনেকে। জাকির হোসেন খামার করতে অন্যদের পরামর্শ দেন। এছাড়া তার হাঁস পালনে সফলতা দেখে এলাকার অনেক তরুণ স্বল্প পরিসরে খামার গড়ে তুলেছেন। খামারে হাঁসের খাবার প্রস্তুত ও খাওয়ানোর কাজে কর্মরত মাসুদ রানা বলেন, আমি রাজশাহী থেকে এসেছি এখানে কাজের জন্য। আমরা এখানে ২৪ ঘণ্টাই থাকি কিন্তু আমাদের ১২ ঘণ্টা কাজ করা লাগে। হাঁসগুলোকে আমাদের খামারে ভুট্টাসহ বেশ কিছু উপাদান দিয়ে একটা খাবার দেওয়া হয়। আমরা ২ বেলা হাঁসের খাবার দিয়ে থাকি। খামারের মালিক জাকির হোসেন বলেন, শুরুটা খুব সহজ ছিল না। ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রমের ফল আজকের এই খামার। তবে স্বল্প পুঁজি নিয়েও হাঁসের খামার করা যেতে পারে। বিশেষ করে পুকুর, ডোবা অথবা খালের পাশে খামার গড়ে তোলা উচিত। কিন্তু অনেকে হাঁসের রোগ-বালাই নিয়ে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে হাঁসের রোগ নির্মূল করা সম্ভব। হাঁস পালনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথাও ভাবছেন বলে জানান জাকির হোসেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শেখ মো. মশিউর রহমান বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। স্বল্প খরচে হাঁস পালন করে বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি প্রচুর আয় করা সম্ভব। তার প্রমাণ এই জাকির হোসেন। তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে হাঁস পালনকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ডিম ও হাঁসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এতে লাভবান হচ্ছেন জাকিরসহ এ জেলার স্থানীয় খামারিরা।