বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে পাট খাতের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জন করতে হবে। আমরা সুন্দর একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি। একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। এজন্য পরিবেশকে দূষণ ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
গতকাল রংপুরে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলার পাট চাষি, মিল মালিক, ব্যবসায়ী এবং পাটখাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পাট অধিদপ্তর ও জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের উদ্যোগে রংপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ আয়োজন করা হয়। রাইস মিলারদের শতভাগ পাটের তৈরি বস্তা ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এতে সামগ্রিক বিবেচনায় আপনারা লাভবান হবেন। পরিবেশের বিষয় তো আছেই।
এছাড়া একেকটি চালের বস্তার ওজন ৪০০ গ্রামের মতো। চালের সাথে আপনারা বস্তার দামও পেয়ে যাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতিতে পাটের হারানো ঐতিহ্য পুনঃরুদ্ধার এবং পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুশাসন ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জাহাঙ্গীর কবির নানক আরো বলেন, সরকার এরই মধ্যে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যমূলক ব্যবহার আইন-২০১০’, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যমূলক ব্যবহার বিধিমালা, ২০১৩’ এবং ‘পাট আইন, ২০১৭’ প্রণয়ন করেছে। এ আইনগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের নিমিত্ত সংসদ সদস্য/জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান/সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র/পৌরসভার মেয়রকে উপদেষ্টা এবং জেলা প্রশাসকদের আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, শেরপুর জেলাসহ চাল উৎপাদন প্রবণ ১৮টি জেলার চালকলসমূহে পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। উল্লেখিত আইন বাস্তবায়নে জেলা চেম্বার, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, চালকল মালিক সমিতি, চালকল মালিক এবং ধান, চাল, গম, ভুট্টা, স্যার ও চিনিসহ মোট ১৯টি পণ্যের উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীদের সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলব এ আইন বাস্তবায়নে আপনারা ধীরে ধীরে কঠোর হন।
পাটকল মালিকদের ৫০ কেজির চালের বস্তা ছাড়াও ২৫ থেকে ৩০ কেজির বস্তা তৈরির আহবান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বেশিরভাগ পরিবারে মাসে ২৫ থেকে ৩০ কেজি চাল লাগে। কাজেই ছোট বস্তা পেলে রাইস মিলাররাও লুফে নেবে।
পাট বীজ উৎপাদনে বিদেশের উপর নির্ভরশীলীলতা কাটিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, পাট অধিদপ্তরের আওতায় উন্নত প্রযুক্তি-নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদনের জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর আওতায় ৩৬টি জেলার ১৫০টি উপজেলায় পাট বীজ উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এজন্য প্রতি উপজেলায় ৩০০ জন করে পাট চাষি বাছাই করা আছে, যারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে পাট বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি পাচ্ছে। কিন্তু এসব প্রণোদনা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত পাট চাষিরা পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে যেজন্য আমরা তেমন সুফল পাচ্ছি না। আরো একটি অভিযোগ রয়েছে, কৃষকরা সময় মতো পাটের বীজ পান না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।
পরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) আয়োজিত বহুমুখী পাট পণ্য মেলা ২০২৪ এর উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জাকির হোসেন এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আসাদুজ্জামান বাবলু, রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাকির হোসেন সরকার, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য
নাছিমা জামান ববি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুর রউফ বক্তৃতা করেন। এছাড়া পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জিনাত আরাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা, চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধি, অটো রাইস মিল ব্যবসায়ী, পোলট্রি ফিড ব্যবসায়ী, বস্তা ব্যবসায়ী, জুট মিল মালিক প্রতিনিধি, চালকল মালিক প্রতিনিধি এবং পাট চাষিরা।