ত্রিশালের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডে স্বামীর স্বীকারোক্তি
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ময়মনসিংহ ব্যুরো
ময়মনসিংহের ত্রিশালে চাঞ্চল্যকর নারী ও দুই শিশুসন্তান হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদ করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া নিহত নারীর স্বামী আলী হোসেন (২৫) লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৩টায় জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ ব্রিফ্রিংয়ে এই তথ্য জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো: শামীম হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘাতক আলী হোসেন ২০১২ সালে দায়ের হওয়া আরাে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলায় সে টানা ৫ বছর কারাভোগ করে ২০১৭ সালের আগস্টে জামিনে মুক্তি লাভ করে। এরপর সে ২০১৯ সালে তার আপন মামাতো বোন আমেনা খাতুনকে বিয়ে করে দিন মজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করছিল। এরই মাঝে তাদের দাম্পত্য জীবনে আবু বক্কর সিদ্দিক ও আনাছ নামে দুটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ফলে তার চার সদস্যের সংসারে অভাব-অনট লেগেই থাকত। এ কারণে সম্প্রতি সে একটি এনজিও থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ করে। ওই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় প্রায়ই তাদের অপমান করা হতো। এতে হতাশ আলী হোসেন স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে। এরই মাঝে গত ১৬ মে রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে গভীর রাতে স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে রে হত্যা করে আলী হোসেন। এরপর মৃত স্ত্রীর ওড়না দিয়ে ঘুমন্ত দুই সন্তানকে হত্যা করে বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে গর্ত করে মাটিতে পুঁতে রেখে পালিয়ে যায় সে। এ ঘটনায় নিহত আমেনা খাতুনের মা হাসিনা খাতুন গত ২২ মে ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। এরপর গতকাল ২২ মে বিকালে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর বাজার এলাকা থেকে আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোহাইমেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফালগুনি নন্দী, সহকারী পুলিশ সুপার তাহমিনা, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেনসহ এই গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবি পুলিশের সদস্যরা।
এর আগে গত ২১ মে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কাকচর নয়াপাড়া গ্রামে একটি নির্জন স্থানে শিয়ালের টানাহেচড়ায় এক নারী ও দুই শিশুকে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখার ঘটনার সন্ধান পায় এলাকাবাসী। এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন- ঘাতক আলী হোসেনের স্ত্রী আমেনা খাতুন (৩০), তার শিশুপুত্র আবু বক্কর সিদ্দিক (৪) ও আনাছ (২)।