মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) স্মার্টকার্ড বিতরণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্টকার্ড ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য অসীম। সংগ্রামের মাধ্যমেই একটি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে পরিমাণ ত্যাগ বাঙালি জাতিকে করতে হয়েছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে আর্থিক উন্নয়নে বিশ্বের দরবারে যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি, সে জন্য মুক্তিযুদ্ধের ঝান্ডা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সঞ্চারিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এই স্মার্টকার্ড হারাবেন না। এটা বীরত্বের একটি স্মারক! হয়ত আপনি থাকবেন না; আপনার কার্ডটা থেকে যাবে! মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার আগে তাদের ত্যাগের কথা স্বীকার করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, আমার ভাষা আসছে না! আমি আসলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে কথা বলতে পারছি, এটা আমার জন্য গৌরবের! আপনারা জাতির সূর্যসন্তান! আপনারা বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের অবস্থান করে দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, বক্তব্য দেবো না। অনুভূতিটুকু শুধু বলব! আনিছ সাহেবের মতো আমার বয়স তখন ১০। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি, এই দুঃখ আজীবন থাকবে। আপনাদের যে সম্মান দিতে পেরেছি, তা আপনাদের সম্মানের তুলনায় অনেক কম। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, একটু বিলম্ব হলেও অনুষ্ঠানটা চলছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মতদ্বৈততার কারণে বিলম্ব হলেও তার জন্য আমরা আনন্দিত, পরিতৃপ্ত।
তিনি বলেন, আপনাদের একটাই লক্ষ্য- দেশের স্বাধীনতা। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার দুঃখ, আমার বয়স তখন ১০। আমি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি, এই দুঃখ থাকবে আজীবন! আপনারা শতায়ু হউন!
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে রাখার জন্য বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কাজ করছে। এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন কমিশন মুক্তিযোদ্ধাদের এই কার্ড দিয়েছে। তারা শুধু সম্মানটুকু পেতে চায়। এইটাই তাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) দাবি, বেশি না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জাবেদ আলী বলেন, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানিত করার মাধ্যনে কমিশনও সম্মানিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে স্মার্টকার্ড বিতরণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে শুরু করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এনআইডিতে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা অনেক বড় উদ্যোগ।
এখানে অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর কথা বলেছেন, এই বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিগ্রে. জেনা. মো. আহসান হাবীব খান (অব.), নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, নির্বাচন কমিশনার মো. আনিসুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী।