গলার সামনে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ৩০ শতাংশ বা প্রায় চার কোটি মানুষ থাইরয়েডজনিত রোগে ভুগে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এন্ড্রোক্রাইন সোসাইটি। এই হরমোনের ভারসাম্যের জন্য শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হওয়া, ক্ষয় হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা এবং চোখ ভয়ংকরভাবে বড় হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া বন্ধ্যাত্ব ও সন্তান মেধাহীন হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য দায়ী বলে জানিয়েছেন তারা। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব তথ্য জানান।
বক্তারা বলেন, থাইরয়েড গ্রন্থিটি গলার সামনের দিকের অবস্থিত। গ্রন্থিটি দেখতে প্রজাপতি সাদৃশ এবং এটি শ্বাসনালির সামনে থাকে। যদিও এটি একটি ছোট গ্রন্থি, কিন্তু এর কার্যকারিতা ব্যাপক। থাইরয়েড গ্রন্থি কর্তৃক নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ার অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ভ্রূণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজন অপরিহার্য। দেশে থাইরয়েড সমস্যার ভয়াবহতা তুলে ধরে জানানো হয়, বর্তমানে বিপুল জনগোষ্ঠী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। এদের অর্ধেকের বেশিই জানে না যে, তারা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশে থাইরয়েড সমস্যার সব ধরনকে এক সাথে হিসাব করলে তা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। ভারতের অবস্থা অনেকটা এমনই। প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা) রোগে ভোগে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, নারীদের মধ্যে ৩.৯ শতাংশ থেকে ১.৪ শতাংশ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিজনিত সমস্যা) থাকতে পারে। আরও প্রায় ৭ শতাংশ নারী ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোমাইরয়েডিজমে ভুগে থাকে।
শিশুর মেধা বিকাশে সমস্যার কথা জানিয়ে বলা হয়, নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা হতে পারে। এর হার ১০ হাজার জীবিত নবজাতকের জন্য ২-৮ হতে পারে। বাড়ন্ত শিশুরাও থাইরয়েড হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে। এ সময় থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে দৈহিক বৃদ্ধির সমতা আনা গেলেও মেধার উন্নতি করা সম্ভব হয় না : অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের হাইপোথাইরয়েডিজম হলে তা দ্রুত সমাধান করা না গেলে বুদ্ধি-বৃত্তির বিকাশ স্থায়ীভাবে ব্যাহত হবে। অনুষ্ঠানে এন্ড্রোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, দেশে তিন থেকে চার কোটি থাইরয়েড রোগী রয়েছে। কিন্তু সঠিক সংখ্যা আমরা জানি না। কারণ আমাদের জাতীয় পর্যায়ে কোনো গবেষণা নেই। রোগীর সংখ্যা না জানা থাকলে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে নানাবিধ রোগের পাশাপাশি সন্তান মেধাহীন হতে পারে। তাই থাইরয়েডের মাত্রা সঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। থাইরয়েডের পরিপূর্ণ চিকিৎসা বাংলাদেশে রয়েছে উল্লেখ করে এজন্য বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও জানান তিনি।