ডিএসসিসির চার প্রকল্প উদ্বোধন

ঢাকাবাসীকে সুন্দর জীবন উপহার দেবে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণের পাশাপাশি গুলিস্তানের ব্যবসায়ীদের আধুনিক বহুতল বিপণিবিতান নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই উপলক্ষ্যে গতকাল পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের স্থানে দশতলা মার্কেটসহ চার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দশতলা বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতান, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়ের বাজার স্লুইস গেট পর্যন্ত আট লেনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মনি সরণি (ইনার সার্কুলার রিং রোড)’, ধানমন্ডি লেকে ‘নজরুল সরোবর’ নির্মাণ এবং শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান’ আধুনিকীকরণ শীর্ষক চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজধানীবাসীর স্বস্তি ফিরবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকাবাসী যাতে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে, সেজন্য তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার বিশেষ করে পুরান ঢাকার মানুষ উপকৃত হবে এবং তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে। এই প্রকল্পগুলো নতুনভাবে বাঁচার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ধিত ঢাকার জনগণ যেন যথাযথ সেবা পেতে পারে সেজন্য নগরীকে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই দুটি অংশে ভাগ করেন। যেগুলো ইউনিয়ন ছিল, সেগুলোকেও সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে এসে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকানাবিহীন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে তার সরকার আবাসিক ফ্ল্যাট ও সম্মানজনক পদবির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তাই ছিল না। তার সরকার সেসব রাস্তা, ওভারপাস, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বাঁধের ওপর রাস্তা, বুড়িগঙ্গা বেড়িবাঁধ করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। আন্তঃজেলা যোগাযোগ সহজ করতে আমরা ঢাকায় একটি রিং রোড নির্মাণ করতে চাই।

বঙ্গবাজার পুনর্নির্মাণের পর ব্যবসা চালু রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে তিনি মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজার বাজারের ব্যবসায়ীদের অনুদান দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, পুরান ঢাকার সঙ্গে তার একটা আলাদা নাড়ির টান রয়েছে। কাজেই এই অঞ্চলের মানুষরা ভালো থাকুক সেটাই তার লক্ষ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হন। তার পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় এসে প্রথমেই তারা ৮/৩ রজনীবোস লেনের একটি বাড়িতে ওঠেন। এরপর বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হলে মিন্টু রোডে চলে আসেন। ৯২ এর ‘ক’ ধারায় জরুরি আইন জারি করা হলে ১৪ দিনের নোটিশে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। ৭৯ নম্বর নাজিরা বাজারে অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ফুপুর বাড়িতে তারা দীর্ঘদিন ছিলেন। মাঝে বন্যা হলে আরমানিটোলার বাঘওয়ালা বাড়িতেও (স্থানীয়রা বলত) ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার জন্ম ঢাকার মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর ছোট ভাই শেখ রাসেলের জন্ম ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে। মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের শুরুটা যেন চানখারপুল থেকে হতে পারে, সরকারে আসার পর তিনিই তার ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া আজ যে প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো, সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও এলাকার মানুষই লাভবান হবে। তারা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে, চলতে পারবে।

বঙ্গবাজারে দশতলা মার্কেট নির্মাণ : দশতলাবিশিষ্ট বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতানে পাঁচটি সাধারণ সিঁড়ি ও ছয়টি অগ্নি প্রস্থান সিঁড়িসহ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিপণিবিতানের প্রতিটি ব্লকের জন্য আলাদা বাহির ও প্রবেশদ্বার থাকবে। এ ভবনে বৈদ্যুতিক যান্ত্রিক কক্ষ এবং প্রতিটি ব্লকের প্রতি তলায় চারটি করে শৌচাগার থাকবে। এছাড়া ভবনের ভূমিতলে ১৬৯টি গাড়ি ও ১০৯টি মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে। ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার। তবে নির্মিতব্য বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতানে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার ৯৬১ জনের সবাইকে পুনর্বাসন করা হবে। পুড়ে যাওয়া মার্কেটে ব্যবসায়ীরা আগে ১৭ থেকে ২২ বর্গফুট আয়তনের দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করতেন। নতুন বিপণিবিতানে প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০ থেকে ১২০ বর্গফুট।

ঢাকার বঙ্গবাজারে পাশে ফুলবাড়িয়া কাপড়ের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, আগুনে পুড়ে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে অত্যাধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। এই উদ্যোগ ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জনবহুল এলাকায় দশতলা ভবনের প্রত্যেক ফ্লোরে ফ্লোরে বিভিন্ন ধরনের দোকান দিতে পারবে ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক ব্যবসায়ীর ভাগ্য বদলে যাবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি : পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আট লেনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ৯৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের আওতায় ১০ কিলোমিটার নর্দমা (ড্রেন), ১০ কিলোমিটার পথচারী হাঁটার পথ (ফুটপাথ), তিনটি উড়াল সেতু (ভেহিকেল ওভারপাস), তিনটি পথচারী পারাপার সেতু (ওভারব্রিজ), দুই কিলোমিটার সংরক্ষণকারী দেওয়াল (রিটেইনিং ওয়াল), তিনটি মসজিদ, ছয়টি যানবাহন বিরতির স্থান (বাস-বে) ও ছয়টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হবে। এতে ঢাকা শহরের ভেতরে বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমার পাশাপাশি বহুলাংশে যানজট নিরসন হবে।

ধানমন্ডি লেকে নজরুল সরোবর : সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ধানমন্ডি লেকে নজরুল সরোবর নির্মাণ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। গতকাল শনিবার এই কাজেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে ‘নজরুল সরোবর’ নামে উন্মুক্ত বিনোদন মঞ্চে একটি ঘাটলা, উন্মুক্ত মিলনায়তন, পথচারীদের হাঁটার পথ, গণপরিসর, রেস্তোরাঁ, বসার স্থান (বেঞ্চ), দৃষ্টিনন্দন বাতি, পর্যাপ্ত সবুজায়ন ও সাউন্ড সিস্টেম স্থাপনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নজরুল ইসলামের স্মৃতিময় মুহূর্ত ও সাহিত্যকর্ম সংবলিত ফলক স্থাপন করা হবে।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান : শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যানের আধুনিকায়ন কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই শিশু উদ্যানের আধুনিকায়নের কাজ করা হবে। ১৯৭৯ সালে স্থাপিত এই পার্কে আগে ১১টি রাইড ছিল। আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেখানে মেগা ডিস্ক, সুপার এয়ার রেস, ফ্লাইং ক্যারোস্যাল, গ্যালিয়ন, ১২ডি থিয়েটার, মাইন কোস্টার, ক্লাইম্বিং কার, সুপার হ্যাপী সুইং, ওয়াটার ম্যানিয়াসহ অত্যাধুনিক নতুন ১৫ ধরনের রাইডস বসানো হবে। এছাড়া আগত দর্শনার্থীদের জন্য শৌচাগার, চত্বর, রেস্তোরাঁ, বিশ্রামস্থল, প্রশস্ত হাঁটার পথ, বসার আসন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সংযোজন করা হয়েছে।