ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেটে গেছে আইলার ১৫ বছর

পুনর্বাসিত হয়নি সাতক্ষীরার ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জনপদের হাজারও পরিবার

* খাবার পানির তীব্র হাহাকার * সংস্কার হয়নি বেড়িবাঁধ
পুনর্বাসিত হয়নি সাতক্ষীরার ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জনপদের হাজারও পরিবার

আজ ভয়াল ২৫ মে। সর্বগ্রাসী আইলার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপকূলজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আইলাকবলিত হাজার হাজার পরিবার এখনো পুনর্বাসিত হয়নি। আশ্রয়হীন জনপদে এখনো চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও খাবার পানির জন্য তীব্র হা-হা-কাণ্ডর।

সর্বগ্রাসী আইলা আজও উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হাজার, হাজার মানুষকে কুরে কুরে খাচ্ছে। সংস্কার করা হয়নি উপকূলীয় এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ। তার উপর আবারও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

২০০৯ সালের ২৫ মে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা ‘আইলা’ আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে। মুহূর্তের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও খুলনা জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী-শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ, হাজার হাজার গবাদি পশু আর ঘরবাড়ি। ক্ষণিকের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো পরিবার। লাখ লাখ হেক্টরের চিংড়ি আর ফসলের খেত তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকূল রক্ষাবাঁধ আর অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সর্বনাশা ‘আইলা’র আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায় নিহত হয় ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু আর আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা এলাকার বাসিন্দা শরবানু, মারুফা, আকলিমাসহ অনেকই জানান, প্রলংয়করী আইলা আঘাত আনার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় অঞ্চল শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশশুনির প্রতাপনগর এলাকায় মানুষের হাহাকার এতটুকু থামেনি। দুমুঠো ভাতের জন্য জীবনের সাথে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে তাদের।

তারা আরও বলেন, আইলার পর থেকে এসব এলাকায় সুপেয় পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাবার পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল। আইলা কবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এখনও ঠিকমতো সংস্কার হয়নি।

তারা বলেন, পানির সন্ধানে নারীদের কলস নিয়ে ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে। অনেকে আবার দূষিত পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।

আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব রহমান, আব্দুস সাত্তার মোড়ল ও আমিনুর ইসলামসহ একাধিকরা জানান, তাদের খাবারের পানিসহ নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ এলাকার মানুষের।

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসিম বরণ চক্রবর্তী বলেন, ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে আবারও লন্ড্ ভন্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় জনপদ। তার উপর ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’র আগমনী বার্তায় উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ ১৫ বছর আগেও সবুজ বনানীতে পরিপূর্ণ ছিল সাতক্ষীরা শ্যামনগর ও আশাশুনির উপকূলীয় অঞ্চল।

তিনি আরো বলেন, শাকসবজি, ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসলে ভরে উঠত পুরো এলাকা। তবে সেদিন আর নেই। লবণাক্ততায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে মাটি। চারিদিকে গাছপালাহীন ঘের আর ঘের। সবুজের বালাই নেই। নেই পরিবেশগত ভারসাম্য।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাউদ্দীন জানান, আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে উপকূলীয় এলাকায় এরই মধ্যে জাইকার অর্থায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজসহ বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরিস্থিতি মোকাবিলা জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ বিভাগের অধিনে এর মধ্যে কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের পরিমাণ প্রায় ৮ কিলোমিটার।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, সরকারি উদ্যোগে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এছাড়া সাতক্ষীরাকে অতি দুর্যোগপ্রবণ জেলা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ারও সরকারে কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, এছাড়া উপকূলীয় এলাকার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ চিহ্নিত করে বালি ও জিও ব্যাগ দিয়ে সংস্কার করার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার আশ্রায়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত