হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেছেন, এবারের ঈদযাত্রা হবে আনন্দ ও স্বস্তিদায়ক। সেটা নিশ্চিতে দায়িত্ব সবাইকেই নিতে হবে। আমরা যেন স্বস্তির সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে ঈদ শেষে ফিরে আসতে পারি সেজন্য কেউ ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রায় শামিল হবো না, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষ্যে মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে গতকাল দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা।
শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঈদযাত্রায় এবার বেশ কয়েকটি বিষয়ে কঠোর থাকবে হাইওয়ে পুলিশ। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রা বন্ধ করা। যানবাহনের ওভার স্পিড এবার শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কোনো যানবাহন যদি নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশেষ করে মালিক শ্রমিক নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঈদের সময় কোনো ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা মেনে নেওয়া হবে না। আপনারা নিজেরা ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে যাত্রী উঠাবেন না, যাত্রীদের অনুরোধ, দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন হোন। জেনেবুঝে গাড়ির ইঞ্জিনে, ছাদে উঠবেন না। হাইওয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, আমরা ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল দিয়ে পেট্রল ডিউটি করে থাকি। ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করি। ঢাকাতে তো আছেই, মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। যেসব যানবাহন বিকল হবে, তাৎক্ষণিক সেটা সরানো ও সারানোর উদ্যোগ এবারও থাকবে। দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে উল্লেখ করে পুলিশের এ অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্পূর্ণ সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ১৪২৭ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। এছাড়া সারা দেশেই পুলিশের ব্যবস্থাপনায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। যে কোনো কাজই করুক না কেন, হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের জন্য বডি অন ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। যাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। সেবার মান বাড়ানোর জন্যই প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সড়ক অনেক প্রশস্ত হয়েছে। ডেডিকেটেড সাব স্টেশন হচ্ছে, এক্সপ্রেসওয়ে হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সার্বিক ও সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে দাবি করে শাহাবুদ্দিন খান বলেন, গত ২-৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে স্বস্তির ঈদ ছিল গত ঈদ। সরকারের পরিকল্পনায় পুলিশ সমন্বয় সাধন করে ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব জায়গায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি বা পারিনি সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বস্তির ঈদযাত্রায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে অনিরাপদ ঈদযাত্রা। যাত্রীরা যা পান উঠে পড়েন, খোলা ট্রাকে পিকআপে, যানবাহনের ইঞ্জিনে। যা জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আবার আমাদের চালকরাও সুযোগ নিয়ে যাত্রী তুলে নেন। এক্ষেত্রে মালিক ও চালকদের সচেতনতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত ঈদে ফিরতি যাত্রায় খোলা ট্রাক আর পিকআপের মধ্যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল।
ড্রোন দিয়ে যানজট, জটলা, বিকল গাড়ি খোঁজা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা, গাজীপুর, সাভারে ঈদের আগে গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। আমরা এবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, ড্রোন দিয়ে দেখবো, কোথায় কী হচ্ছে। কোথায় জটলা লাগছে। গার্মেন্টস কর্মীরা যাতে ঈদে স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারেন সেজন্য কারখানাতেই ব্যবস্থাপনা রাখতে হবে। কারখানাগুলোতেই পরিবহন ব্যবস্থা করা ও যানবাহনগুলো ঠিক করা। এক্ষেত্রে শিল্প পুলিশ, কারখানা কর্তৃপক্ষ মালিক শ্রমিক সবাই সহযোগী হবেন।
সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা বাস-ট্রাক ওনার্স গ্রুপ, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, পণ্য পরিবহন বিভাগ, বাংলাদেশ ট্যাংক লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাস মালিক সমিতি, মহাখালী বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।