ঢাকা ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে রিমালের দুর্যোগে ভারি বর্ষণ ও দমকা হাওয়া

কক্সবাজারে রিমালের দুর্যোগে ভারি বর্ষণ ও দমকা হাওয়া

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল দুর্যোগ কেটেছে কক্সবাজারে। তবে, রিমালের প্রভাবে উপকূলজুড়ে বইছে ঝড়ো ও দমকা হাওয়া। থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টিপাত। গতকাল সকালে দমকা হওয়ার সঙ্গে বজ্রপাতও হয় বেশ কয়েকবার। কক্সবাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সদর উপজেলার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়াছটা, চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখালীর চরাঞ্চল, মহেশখালীর ধলঘাটা, কুতুবদিয়ার নিম্নাঞ্চল, ঈদগাঁওয়ের পোকখালী, গোমাতলীসহ অন্তত দুই ডজনাধিক গ্রাম। এরপরও কোথাও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও মেরিন ড্রাইভ, ঈদগাঁওর ভাদিতলাসহ বেশকিছু এলাকায় গাছ উপড়ে সড়কে পড়েছে। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈদ্যুতিক তার। বাতাসে হেলে গেছে ৩৩ হাজার ভোল্টেজের তার চালানো পিলারও। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (গতকাল বিকাল ৩টা) থেমে থেমে গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল কক্সবাজারজুড়ে। আকাশ রয়েছে মেঘাচ্ছন্ন। তবে কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় রিমালের বিপদ কটেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কমিয়ে দেয়া হয়েছে বিপদ সংকেতও। আর যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানী এড়াতে উপকূলীয় বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। কক্সবাজারে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক অনিরাপদ থাকা উপকূলবাসীকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসে সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রথমাংশ কক্সবাাজার সমুদ্রবন্দরকে অতিক্রম করেছে। শেষের অংশটি তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। তাই আতঙ্কের কিছু নেই। এখন ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত কমিয়ে কক্সবাজারকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকতে দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে ভারি বর্ষণের পাশাপাশি জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন এ আবহাওয়াবিদ।

এদিকে, ভোররাতের দমকা হাওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে গাছ ভেঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। ভারি বর্ষণের পর পাহাড় থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানিতে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নিম্নাঞ্চলে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ বাড়ায়।

মহেশখালী পৌরসভার আব্দুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। তবে পৌর এলাকায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকেছে এলাকায়। ধলঘাটার আতা উল্লাহ জানান, সাগরে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়ায় লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি। ইউনিয়নের অনেক এলাকার বেড়িবাঁধ আগে থেকেই ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। এখানকার মানুষকে গত রোববার বিকালেই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত শনিবার নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালে রূপ নেয়ার আগেই কক্সবাজারে মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় জেলা প্রশাসন। সচেতনতায় মাইকিংয়ের পাশাপাশি উপকূলীয় লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার তাগাদা দেয়া হয়। ফলে, গত রোববার বিকাল হতে সন্ধ্যার সময় বিপদাপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। প্রায় ১০ হাজার মানুষকে রাতেই আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসে খাবার ও আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনাধীর ব্যবস্থা করা হয়। দমকা হওয়া বইলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষতির খবর এখনো পায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এলাকায় সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা ও ক্ষয়ক্ষতি হলে তা নিরুপণের তাগাদা দেয়া হয়েছে। আগে থেকেই সতর্ক থাকায় উৎপাদিত লবণ ও বোরো ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলায় ৬৩৮টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে জরুরি মোকাবিলায় জিআর নগদ দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা, দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবস্থাপনা তহবিলের ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৮ টাকা, ৪৮৬ মেট্রিক টন চাল মজুত রাখা হয়। খোলা হয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এছাড়া দুর্যোগকালীন কাজ করেছে ৮ হাজার ৬০০ জন সিপিপি এবং দু’হাজার ২০০ জন রেডক্রিসেন্ট সদস্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত