দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় চলতি মৌসুমে ভুট্টার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ উপজেলায় অধিকাংশ কৃষক ধান চাষের পাশাপাশি স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বিঘা প্রতি ফলন পাচ্ছেন ৬৫ থেকে ৭০ মণ। মাঠ থেকে ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বাজারে এখন ভুট্টার দামও ভালো পাচ্ছেন তারা। উপজেলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা ভুট্টা প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকা। আর শুকনা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। সরেজমিন উপজেলার গোবিন্দপুর, গোয়ালডিহি, কাচিনীয়া, খামারপাড়া, আঙ্গারপাড়া, হোসেনপুর, টংগুয়া, ধর্মপুর, দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে বিস্তীর্ণ ভুট্টাখেত। সাধারণত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ভুট্টার বীজ বপন করা হয়। এপ্রিলের শেষ ও মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এ ভুট্টা খেত থেকে উত্তোলন শুরু হয়। কিছু কিছু খেতে গাছের আগা ও পাতা ছেঁটে ফেলা হয়েছে, যেন ভুট্টার মোচায় রোদের তাপ লাগতে পারে। অধিকাংশ খেতে গাছ থেকে ভুট্টার মোচা তোলা ও সংগ্রহকাজে উপজেলাজুড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে অধিক লাভের ফলে প্রতি বছর ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ভুট্টা চাষ হয়েছে ৮২৮৫ হেক্টর। এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ভুট্টা চাষ হয়েছে ৮৪৯০ হেক্টর। উপজেলার চাকিনিয়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার শীতের প্রকোপ বেশি থাকা, সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত এবং রৌদ্রের প্রখরতা তেমন না থাকায় ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। মোচাগুলো বড় হয়েছে। ভুট্টার দানা বড় ও পরিপক্ব হওয়ায় বেড়েছে ওজন। উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের ভুট্টা চাষি আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও আগাম জাতের তাজমহল, পুনর্ভবা ৩৫৫৫, কাবেরি-৫ জাতের ৫ বিঘা ভুট্টা চাষ করেছি। আগাম ভুট্টার চাহিদা বেশি ও দামও ভালো পাওয়া যায়। আমার প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষে জমি তৈরি, সার, বীজ, শ্রমিকের মজুরি ও সেচসহ সর্বমোট ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, যদি দাম ভালো থাকে তাহলে, প্রতি বিঘা ৬০-৭০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারব। হাসিমপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি মশিউর রহমান বলেন, ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় এ বছরও এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। তবে এখন একটু দাম কম তবুও বিঘায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ হবে। এতে লাভের পরিমাণ কম হলেও এ চাষে লোকসান হয় না। ভুট্টা ব্যবসায়ী হাসানুর রহমান বলেন, প্রতি কেজি হাইব্রিড কাঁচা ভুট্টা ২২-২৪ টাকা কেজি দরে কিনে শুকানোর পর ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন কোম্পানি ও এজেন্টের কাছে বিক্রি করি। এতে করে এ ভুট্টার সিজনে আমরাও লাভবান হই। উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা যদুনাথ রায় বলেন, ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। তা ছাড়া কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এ জন্য কৃষকদের সবধরনের সহায়তা প্রদানে কাজ করছি। সেই সঙ্গে ভুট্টার ক্ষতিকর বালাই সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছি। এতে কৃষকরা ভালো ফলন ও দাম পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবা আক্তার বলেন, এ বছর উপজেলায় ভুট্টাচাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টার রোগবালাই কম এবং উৎপাদন ও লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা আবাদের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। পোলট্রি ফিড ব্যতীত ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার বাড়ালে এ ফসলটির স্থায়িত্ব এবং চাষাবাদ আরো অনেকাংশে বেড়ে যাবে।