জাতিসংঘের ত্রাণপ্রধান
গাজা ভূখণ্ডে হামলায় ইসরায়েলের দায়মুক্তি চলতে পারে না
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় আট মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের ‘দায়মুক্তি চলতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্টিন গ্রিফিথস। একইসঙ্গে গাজার নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
রাফায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনির হতাহতের ঘটনার পর এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের ত্রাণপ্রধান সোমবার দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে বাস্তুচ্যুত লোকদের শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা করে বলেছেন, ‘এ ধরনের দায়মুক্তি চলতে পারে না।’
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় মার্টিন গ্রিফিথস লিখেছেন, ‘গাজা থেকে আরেকটি ভয়ংকর আপডেট পেলাম। গত রাতে রাফাতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু জীবন্ত পুড়ে মারা গেছেন।’ গাজায় ত্রাণ বিতরণে চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে গ্রিফিথস বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতা এবং তীব্র লড়াইয়ের কারণে আমরা এখনও কেরেম শালোম থেকে পণ্যগুলো নিতে পারিনি।’
গ্রিফিথস বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই ধরনের দায়মুক্তি চলতে পারে না। বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করুন। তাদের নিরাপদ জায়গা খোঁজার সুযোগ দিন। তাদের সাহায্য পেতে দিন।’
এর আগে গত রোববার রাতে গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরে বাস্তুচ্যুত লোকদের শিবিরে ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। হামলায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২৫০ জন মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রোববারের ওই হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আরও শতাধিক মানুষ গুরুতরভাবে আগুনে পুড়ে গেছে, হাত-পা ভেঙে, অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে।
গাজা-ভিত্তিক সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, রাফার তাল আল-সুলতানে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) লজিস্টিক ঘাঁটির কাছে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
এদিকে রাফাহর আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলাকে স্রেফ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামলার আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও শহরটিতে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করলেন তিনি। ভয়াবহ ওই হামলার পর সোমবার পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে এ অঙ্গীকার করেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ভাষণে নেতানিয়াহু আরও বলেন, রাফাহ থেকে আমরা এরই মধ্যে অন্তত ১০ লাখ বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিয়েছে। তাদের ক্ষতি না করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যবশত কিছু মর্মান্তিক ভুল হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
হামলার ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানালেন নেতানিয়াহু। বললেন, এই যুদ্ধে যারা জড়িত নন, তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
রাফাহয় রবিবারের ওই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সাম্প্রতিক নির্দেশনা মেনে রাফায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রবিবারের হামলাকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন ইইউ প্রধান জোসেফ বোরেল।
রোববার রাফাহর তাল আল সুলতানের একটি আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়। হামলায় হামাসের দুই কমান্ডার নিহতের দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে তবে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, জাতিসংঘের অস্থায়ী অফিসের কাছের ওই আশ্রয়কেন্দ্রকে লক্ষ্য করেই হামলাটি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
প্যারিসে ১০ হাজার লোকের ইসরায়েলি বিক্ষোভ
গাজা উপত্যকার রাফা শহরে ইসরায়েলের ভয়াবহ গোলাবর্ষণের বিরুদ্ধে সোমবার প্যারিসে ইসরায়েলি দূতাবাসের কাছে প্রায় ১০ হাজার লোক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। খবর এএফপি’র।
ফরাসি রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে ‘আমরা সবাই গাজার শিশু’, ‘মুক্ত গাজা’ এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনপন্থি স্লোগান দেয়।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রাফাতে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের হামলার একদিন পর এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে ইসরায়েলের হামলায় ৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। এই হামলার ঘটনায় ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার মুখে পড়েছে।
সমাবেশের আয়োজনকারী অ্যাসোসিয়েশন ফ্রান্স-প্যালেস্টাইন সলিডারিটি গ্রুপের ফ্রাঁসোয়া রিপ বলেছেন, ‘এটি একটি বড় ধরনের গণহত্যা।’
এদিকে প্যারিস পুলিশ সার্ভিস জানিয়েছে, বিক্ষোভণ্ডসমাবেশে প্রায় ১০ হাজার লোক অংশগ্রহণ করেছিল।
সমাবেশে একটি বড় ব্যানারে লেখা ছিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘মানবতাকে হত্যা করছে।’