ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল তাণ্ডব থেকে এবারও উপকূল রক্ষায় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে সাতক্ষীরাকে বাঁচাল সুন্দরবন। বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলেও আতঙ্ক কাটেনি উপকূলীয় জনপদের মানুষের মধ্যে।
তবে, রিমালের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ উপচে উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। জেলায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে ১ হাজার ৪৬৮টি কাঁচা ঘরবাড়ি। এর মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ হাজার ১৯২টি ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২৭৬টি ঘরবাড়ি।
এছাড়া জেলায় ৬০৬ হেক্টর জমির ফসলের ও ২০০ হেক্টর জমির মাছের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৬ জন মানুষ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলে পল্লীর শতাধিক পরিবার।
একই সাথে শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলাতে অসংখ্য গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নদ-নদীগুলোতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতাধীন ৬৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যা ষাটের দশকে নির্মিত। এর মধ্যে উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির ১০টি পয়েন্টে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যার মধ্যে উক্ত দুই উপজেলায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এসব ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের কয়েকটি পয়েন্টের উপচেপড়া পানিতে ভেসে গেছে ২০০ হেক্টর জমির মৎস্যঘের ও ৬০৬ হেক্টর ফসলি জমি। এছাড়া কয়েকশ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলোতে জিও ব্যাগ ও বালু দিয়ে উপচেপড়া পানির প্রবাহ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরার ৪৩টি ইউনিয়নে কম বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ হাজার ১৯২টি ঘরবাড়ি ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২৭৬টি ঘরবাড়ি। এছাড়া ৬০৬ হেক্টর ফসলি জমির ও ২০০ হেক্টর জমির মাছের ক্ষতি হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, রিমালের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ উপচেপড়া পানিতে উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে অর্ধশতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়ে ২০০ হেক্টর জমির মাছের ক্ষতি হয়েছে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কেএম ইকবল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জে ১৫টি ক্যাম্পে সুপেয় পানির পুকুরসহ প্রায় এক কোটি ছয় লাখ টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। এখানে ভেসে আসা তিনটি হরিণ উদ্ধার করে পুনরায় সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গাছগাছালি বা বন্যপ্রাণীদের কি কি ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। এছাড়া সুন্দরবনের সুপেয় পানির পুকুরগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা দ্রুত সেচের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব টানা দুই দিন ধরে চলেছে। বিভিন্ন উপজেলায় মানুষের জানমালসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির একটি সম্ভাব্য তালিকা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ক্ষতির তালিকা নিরূপণ করে সহযোগিতা করা হবে।