ঢাকা ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুষ্টিয়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ২ লাখ পশু

বাজারে ক্রেতা কম খামারিরা চিন্তিত
কুষ্টিয়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ২ লাখ পশু

দেশে পশুর চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা রেখে আসছেন কুষ্টিয়া অঞ্চলের খামারি ও কৃষকরা। এবার কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে জেলার প্রায় ১৯ হাজার খামারি উৎপাদন করেছেন প্রায় ২ লাখেরও বেশি গরু। এছাড়া ৮০ হাজার ছাগল পালন করেছেন এখানকার খামারিরা। গরুর ক্রেতারা দাম কম বলায় এত পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। প্রতিদিন হাটবাজারে হাজার হাজার পশু বিক্রির জন্য নিয়ে এসে ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষকরা। প্রতি বছর ঢাকা-চট্টগ্রামের ক্রেতারা সরাসরি কুষ্টিয়া এসে বাড়ি বাড়ি খামারে গিয়ে গরু ক্রয় কিংবা মোবাইল ফোনে গুরুর ছবি দেখে দাম করে কিনতেন। এবার ক্রেতা কম থাকায় কমতে শুরু করেছে সব ধরনের পশুর দাম। সবমিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ পশু উৎপাদন করে বড় লোকসানের মুখে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পশুর মোকামের খামারিরা। লাভ নয় গরু বিক্রি করে আসল তোলায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন খামারিরা।

কুমারখালী উপজেলার যদুবয়বা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের খামারি হান্নান মোল্লা। সারা বছর বাড়িতে কম-বেশি গরু পালন করেন। ঈদ সামনে লাভের আশায় গরুর সংখ্যা বাড়ান। এবারো তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ছয়টি গরু রয়েছে। দিন-রাত গরু পরিচর্যায় সময় পার করছেন। তবে ঈদ যত এগিয়ে আসছে, তার চিন্তা তত বাড়ছে। ক্রেতা কম থাকায় লাভের আশা তো দূরে থাক বাজারে নিয়ে গরু বিক্রি করে আসল তুলতে পারবেন কি না, এটা তার সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। হান্নানের মতো বেশির ভাগ খামারির গরু বিক্রি করা নিয়ে এখন থেকে নানা চিন্তা শুরু করেছেন। তবে কম লাভ হলেও অনেক খামারি স্থানীয় বাজারে আগেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।

জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিম্নবিত্ত এবং দরিদ্র শ্রেণির মানুষ গরু লালন পালন করে থাকেন। এসব পরিবার তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুলেছেন খামার। সব খামারেই দেশি ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু পালন করা হয়। তারা স্বপ্ন দেখেন সারা বছর লালন করা গরু বিক্রি করে কিছুটা সাবলম্বী হবেন। বিশেষ করে রিকসা, ভ্যান, অটোচালক কিংবা দিনমজুর নানা পন্থায় কিছু টাকা জমিয়ে অথবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ছোট ছোট গরু কিনে লালন পালন করেন। কিন্তু এবার শুরুতেই ক্রেতা কম গরুর দাম না পেয়ে দিশাহারা তারা। এমন পরিস্থিতিতে মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়তে যাচ্ছেন জেলার খামারির।

খামারিরা জানান, প্রতি কোরবানির ঈদের দুই-এক মাস আগে থেকেই হাটে হাটে ঘুরে ব্যাপারীরা গরু কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যেত। এবার সেই সংখ্যা অনেক কম। জেলায় বড় পশুর হাট রয়েছে ১২টি। এসব হাট ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরো ছোট ছোট হাট-বাজারে বিক্রির জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-ছাগল নিয়ে আসছে খামারিরা। কিন্তু কেনাবেচা একদম কম। ঈদুল আজহার আর মাত্র ১৮ দিন বাঁকি থাকলেও বাইরের ব্যাপারীদেরও দেখা মিলছে না।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস মনে করছে, এবার ৫০ ভাগ গরু অবিক্রিত থাকতে পারে। আর যারা বিক্রি করতে পারবেন তারাও লাভ করতে পারবেন না খুব একটা। এতে খামারিরা বড় লোকসানে পড়ে যাবেন। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই আগামী কয়েক বছর লোকসানে থাকবেন। কারণ, যারা গো-খাদ্য বিক্রি করেন তারাও কোরবানির জন্য অপেক্ষা করেন। গরু বিক্রি দেনা শোধ করেন অনেকে। তাই তাদের বড় অর্থ খামারিদের কাছে পাওনা থেকে যাবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলায় ১৮ হাজার ৯৫০টি খামারে এবার ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৭টি গরু, বলদ ও গাভি ২০ হাজার ও ৮০ হাজার ১৮৪টি ছাগল উৎপাদন করেছেন খামারিরা। গত বছর ৯০ হাজার ৭১৩টি গরু ও ৭০ হাজার ছাগল উৎপাদন করলেও এবার উৎপাদন আরো বেড়েছে।

কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রামের খামার মালিক সোহেল রানা জানান, গত বছর ৭ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এত টাকা বিনিয়োগ করে যদি ভালো দাম না পাই, তাহলে খামারিদের দুঃখের সীমা থাকবে না। গরু বাজারে নিয়ে বিক্রি করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন তিনি। তাই বাড়ির ওপর থেকে বা স্থানীয়ভাবে কম লাভ হলেও গরু ছেড়ে দেবেন বলে জানান। তার খামারে পাঁচটির মতো বড় গরু রয়েছে।

আজাহার আলী নামের একজন গরু ব্যবসায়ী বলেন, গরুর বাজার কম। কোরবানির আগে দাম বাড়বে বলে মনে হয় না। মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই কোরবানির সংখ্যা এবার কম হবে। বেশির ভাগ প্রান্তিক খামারি এবার লোকসানে পড়বেন। অনেকেই গরু বিক্রি করতে পারবেন না। যারা বিক্রি করতে পারবেন তারাও লাভ পাবেন কম। সদর উপজেলার আরেক বড় খামারি সোনাইডাঙ্গা গ্রামের শরিফ হোসেন। তার খামারে ছোট বড় মিলিয়ে ৬০টি গরু রয়েছে। এ গরুর অর্ধেক বিক্রি করা নিয়ে তার টেনশন। লাভ নিয়ে ভাবছেন না। গরু বিক্রি করতে পাললেই তিন খুশি। কারণ খামারে গরু থেকে গেলে প্রতিদিন তার পেছনে ব্যয় আছে। তাতে লোকসান আরো বাড়বে। তাই খামার খালি করা নিয়েই ভাবছেন তিনি।

জেলা প্রাণসিম্পদ কর্মকর্তা ডা. আল মামুন হোসেন মন্ডল বলেন, জেলায় এবার প্রচুর গরু পালন করছেন খামারিরা। তবে ঈদ এগিয়ে আসায় তাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। জেলার সব খামার মালিকরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে গরু নিয়ে লাভ করতেন। কিন্তু এবার ক্রেতা কম থাকায় তারা চিন্তিত। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে গরুর বাজার। তারপরও ভালো দাম পাবে বলে মনে করছি। স্থানীয় বাজারে কেনাবেচা হলেও বাইরে থেকে ব্যাপারীরা গত বছরের তুলনায় কম আসায় চিন্তা বেড়েছে খামারিদের। তিনি বলেন, আমরা খামারিদের মনোবল বাড়াতে কাজ করছি। তাদের নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে আসছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত