ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট

ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট দেখিয়ে একমাত্র বিশেষ ট্রেন বন্ধ

ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট দেখিয়ে একমাত্র বিশেষ ট্রেন বন্ধ

ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টার সংকটের কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী একমাত্র বিশেষ ট্রেন। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত ট্রেনটি চলাচল করার কথা থাকলেও গত বৃস্পতিবার থেকে এটি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে স্থায়ী ট্রেন চালুর উদ্যোগও। এদিকে বিশেষ ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এ রুটের যাত্রীরা।

যাত্রীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন চালু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত ৮ এপ্রিল এই ট্রেন চালু হওয়ার পর থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। যাত্রীদের চাপে বিশেষ ট্রেনের সময় দুই দফা বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর আগেই ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হলো ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টার সংকটের কারণ দেখিয়ে।

প্রতিদিন এই বিশেষ ট্রেনে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাতায়াত করতেন ৮৭৬ জন যাত্রী। যাত্রাপথে ট্রেনটি থামত আট স্টেশনে। এতে তুলনামূলক কম খরচে যাতায়াতের সুযোগ পেতেন যাত্রীরা। বিক্রি হয়ে যেত শতভাগ টিকিট। এই রুটে শিগগিরই স্থায়ী ট্রেন চালুর পরিকল্পনার কথা বলা হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। এমন প্রেক্ষাপটে বিশেষ ট্রেনটি বন্ধ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা। বাসমালিকদের সাথে আঁতাত করে ট্রেনটি বন্ধ করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

বর্তমানে শুধু ঢাকা থেকে কক্সবাজারে দুটি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনের একেকটিতে চট্টগ্রামের জন্য মাত্র ১১৫ আসন নির্ধারিত রয়েছে। এ অবস্থায় যান্ত্রিক বিভাগ থেকে ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট থাকার কথা জানানো হয়েছে। এজন্য কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। তবে ১২ জুন থেকে সাময়িকভাবে আবারও বিশেষ ট্রেন চালুর পরিকল্পনার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, শিগগিরই কক্সবাজার রুটে আরও ট্রেন চালুর পরিকল্পনার চলছে।

পরিবহন মালিকদের প্রেসক্রিপশনে এই ট্রেন বন্ধ করা হচ্ছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একই সঙ্গে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রীরা যখন স্পেশাল ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন, তখন একে একে সব পরিবহনে যাত্রী-সংকট দেখা দেয়। এতে মালিকরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রীপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া কমাতে বাধ্য হন। তারপরও যাত্রী না পাওয়ায় মালিকরা রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ফেলেছে বলে এই রুটে চলাচল করা যাত্রীদের অনেকেই মনে করেন। তাই বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশনে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করা হচ্ছে।

মোজাম্মেল হক আরও বলেন, রেলওয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা সরকারের আকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে কেবল বাস মালিকদের লাভবান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই দ্রুত কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকার যাত্রীসাধারণকে সরকারের এই অনন্য অবদান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল পরিষেবা গ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বিশেষ ট্রেন বন্ধের প্রতিবাদে সিপিবির মানববন্ধন কাল : চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কক্সবাজার জেলা শাখা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামীকাল বিকেল ৩টায় কক্সবাজার রেল স্টেশন চত্বরের ওই কর্মসূচিতে সকলকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সিপিবি কক্সবাজার জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত