দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চার ঘণ্টাব্যাপী তদন্ত করেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলার উত্তর গড়েয়া এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে মো. মিজানুর রহমান ১০৬ জরুরি হেল্প নাম্বারে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দিনাজপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে উপ-সহকারী পরিচালক মো. কামরুন নাহার সরকার, সহকারী পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান ও উচ্চমান সহকারী মো. শাহজাহান আলীর সমন্বয়ে একটি তদন্ত দল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এলে ও তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্নীতির সাথে নকলনবিশ জড়িত সুমন, রশিদসহ আরো কয়েকজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য প্রমাণ নিয়ে ঘুষখোর অফিসারের খাস কামরায় তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপন করে। ফলে দুদকের তদন্ত টিম ওই রুমের তালা ভেঙে প্রবেশ করে ঘুষ দুর্নীতির সাথে জড়িত সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলকে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসা করেন। প্রাথমিক তদন্তে সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনীত ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ সত্য মর্মে স্বীকার করে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ভুয়া দলিল করতে মাঠ পর্চা ও নামজারি থাকার পরেও বাটোয়ারা দলিলের অজুহাতে ৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করার তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আরো অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছেন এবং সেগুলো আমলে নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত শেষে দুদক টিম স্থান ত্যাগ করতে চাইলে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা রিপন মণ্ডলের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। বীরগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে সীমাহীন ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগকারী মিজানুর রহমান জানান, আমি সীমাহীন হয়রানির শিকার হয়ে দুদকে অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি। অভিযুক্ত বীরগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনীত ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞেসাবাদে সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারেননি এবং তিনি জানান আমি একা দুর্নীতি করি এটি সত্য নয়, এ দুর্নীতির সাথে দলিল লেখকদের রয়েছে একটি বিশাল নেটওয়ার্ক। তার খাস কামরায় স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার পাস ওয়ার্ড তিনি জানেন না বলে জানান তদন্ত টিম ও মিডিয়ার সামনে এবং কে এটি পরিচালনা করেন তাও বলতে পারেননি, দায়িত্বে চরম অবহেলা ও উদাসিন বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জেলা রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দিন। রাতে জেলা রেজিস্ট্রারের পরিদর্শনের পূর্বে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলে এলাহী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজ কুমার বিশ্বাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা স্থানীয় অভিযোগকারীসহ সাংবাদিকদের সাথে দীর্ঘক্ষণ ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে ব্যাপক শুনানি করেন, অভিযোগকারীরা মুখোমুখি ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে এলাহী বলেন, হঠাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বীরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে আমার জানা নেই। সাংবাদিক ও স্থানীয় ছাত্রনেতাদের মাধ্যমে জানতে পেরে ছুটে এসেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধিমতে ব্যবস্থা হবে, তবে সবাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলবেন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না করতে তিনি সবাইকে অনুরোধ জানান।