ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্যরকম

মাটি খুঁড়তেই মিলল শত বছরের পুরোনো নৌকা

মাটি খুঁড়তেই মিলল শত বছরের পুরোনো নৌকা

ঝিনাইদহের মহেশপুরে মাটি খুঁড়তে গিয়ে কয়েকশ’ বছরের পুরোনো নৌকার সন্ধান পাওয়া গেছে। বিরল এ দৃশ্য দেখতে আশপাশের এলাকা থেকে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে ইউরোপীয় এবং স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা নৌবিহারের জন্য এ ধরনের নৌকা ব্যবহার করত। সেই তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, নৌকাটি কয়েকশ’ বছরের পুরোনো। সম্প্রতি উপজেলার এসবিকে ইউনিয়নের বজরাপুর গ্রামে এমন দৃশ্য দেখা যায়। মাটির চার ফুট নিচে খনন কাজ চালানোর সময় নৌকাটি সবার নজরে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বজরাপুর গ্রামের নজের আলীর ছেলে মনছের আলী তিন দিন আগে বজরাপুর বাঁওড় থেকে ধানক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য সেচ খাল খনন করছিলেন। খাল খুঁড়তে খুঁড়তে তার কোদালের মাথায় নৌকার কিছু অংশ ওঠে আসে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী নৌকার সন্ধানে খনন করতে থাকে। তিন দিন ধরে খননের পর গত বধুবার পুরো নৌকার আকৃতি খুঁজে পাওয়া যায়। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য পূর্ণিমা রানী বলেন, নৌকার প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘বজরা’। এ গ্রামের নামও বজরাপুর। একটা সময় এখানে মানুষের চলাচলের একমাত্র সম্বল ছিল নৌকা। সেই নাম অনুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বজরাপুর’। তিনি বলেন, খবর পেয়ে তিনিও বজরাপুর বাঁওড় এলাকার হালদার পাড়ায় গিয়ে নৌকাটি দেখে এসেছেন। এটি সংরক্ষণের দাবি করেন তিনি। খননকাজে যুক্ত বজরাপুর গ্রামের ইসমাইল মল্লিক জানান, নৌকাটি লম্বায় প্রায় ১০০ ফুট লম্বা ও চওড়া ২০ ফুট হবে। নৌকার বেশির ভাগ অংশ বাঁওড়ের মধ্যে ঢুকে আছে। হয়তো নৌকাটি শাল কাঠ দিয়ে তৈরি করা। বজরাপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, গ্রামের কৃষক মনছের আলীর জমিতে পাওয়া নৌকাটি বহুকালের পুরোনো। কাঠগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। লম্বা কাঠগুলো কিছুটা ভালো আছে। মাটির চার ফুট নিচে এই নৌকাটি পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, নৌকাটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। তবে এখনো প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেননি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বজরা অধিক ওজন বহনকারী বড় ধরনের একটি নৌকা হিসেবে পরিচিত। খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্যবহার করা এ নৌকার দুই-তৃতীয়াংশ জায়গাজুড়ে থাকত ঘুমানো বা বিশ্রামের কক্ষ। ঘরবাড়ির মতো এসব কক্ষে থাকত জানালা। সাধারণভাবে যাত্রীর ধারণক্ষমতা ১০ থেকে ১২ জন। ভেতরে চারজন মাঝির সঙ্গে রান্না ও অন্যান্য কাজের জন্য দুজন সহযোগী থাকতেন। স্থানীয় পূজা রানী বলেন, বজরাপুর গ্রাম একটি প্রাচীন জনপদ। এই গ্রামটি কপোতাক্ষ নদের সংযোগস্থলে গড়ে ওঠে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ জমিদার ও আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। ফলে এ নৌকাটি বজরাপুর গ্রামের নামকরণ ও গ্রামের মানুষের জীবনযাপনের সাক্ষ্য বহন করে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পূজা রানী নৌকাটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে গবেষণা কাজে লাগানো যায় কি না, সে সরকারের ব্যাপারে সুদৃষ্টি কামনা করেন। বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপ দাস জানান, পুরোনো নৌকা পাওয়ার বিষয়টি তিনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে জানাবেন, যাতে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত