ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাঁদপুরে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৬১ হাজার পশু

পশুখাদ্য বৃদ্ধি ও উৎপাদনে প্রভাব পড়বে দামে
চাঁদপুরে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৬১ হাজার পশু

চাঁদপুরে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭৮ হাজার ৫৬৬টি। সেখানে বর্তমানে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া মিলে কোরবানি পশু রয়েছে, ৬১ হাজার ৪৮৯টি। এক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় কম রয়েছে ১৭ হাজার ৭৭টি পশু।

কোরবানির পশু তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার খামারিরা। তবে সরকারিভাবে চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ১৭ হাজার ৭৭টি পশু কম রয়েছে।

চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর চাঁদপুর জেলায় কোরবানিযোগ্য ৬১ হাজার ৪৮৯টি পশু সম্পূর্ণ তৈরি করে রাখা হয়েছে। অথচ জেলায় চাহিদা রয়েছে ৭৮ হাজার ৫৬৬টি পশুর। কোরবানির জন্য তৈরি থাকা ৬১ হাজার ৪৮৯টির মধ্যে গরু রয়েছে ৩৩ হাজার ৮৪৩টি, মহিষ ২২৬টি ও ছাগল ২৫ হাজার ৮৭৬টি এবং ভেড়া ১ হাজার ৪০২টি। এছাড়া অন্যান্য পশু রয়েছে ১৪২টি।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকা মোতাবেক মোট ১৫১টির মতো পশুর হাট থাকবে এ জেলায়। এছাড়া কোরবানি ঈদ উপলক্ষে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে পশু হাটে তাদের টিম কাজ করবে। তবে, এক্ষেত্রে দুই-থেকে তিনটি ইউনিয়ন একসাথে মিলে একজন ডাক্তার থাকবেন তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় যে পরিমাণ পশু রয়েছে, তাতে কোরবানি ঈদের চাহিদা মেটাতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক।

জানা যায়, কোরবানিকে কেন্দ্র করে পশুর মালিক, ব্যবসায়ী ও কোরবানি দাতাদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে। সাপ্তাহিক হাট, পাড়া-মহল্লায় গরু ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, একটু কম দামের আশায় আগে থেকে অনেকেই অগ্রীম টাকা দিয়ে পশু বায়না করে রাখছেন। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাবি, পশুখাদ্য বৃদ্ধি ও উৎপাদনে দামের প্রভাব পড়বে গরুর হাটে।

ভারতীয় গরু আমদানি সম্পর্কে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, দেশে সরকারিভাবেই ভারতীয় গরু আমদানি করা নিষিদ্ধ আছে। ভারতীয় গরু না থাকলেও কোরবানি পশুর চাহিদা মেটাতে সমস্যা হবে না।

এছাড়া অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে তিনি বলেন, যারা মূলতঃ বড় খামারি তাদেরকেই বেশিরভাগ অনলাইনে পশু বিক্রি করতে হয়। তবে, চাইলেই ফেসবুক পেইজ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও পশু বিক্রি করা যাবে, এতে কোনো ধরনের বাধা নেই। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে কোনো প্রকার সমস্যা হলে তার সমাধানের জন্য জেলা ভোক্তা অধিকার সব সময় পাশে আছে এবং কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে তিনি জানান।

এই পশুগুলো মূলত মানুষের বাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন খামারে লালন-পালন করা হচ্ছে, যা কোরবানিতে বিক্রির আশায়। তবে পশু খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় প্রভাব পড়বে কোরবানির হাটে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরো বলেন, বর্তমানে রাশিয়া- ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে খাদ্য সংকটে সমস্যা হয়ে গেছে সারাবিশ্বেই। পশুর মূলত প্রধান খাদ্য ভূট্টা ও গম। খাদ্য যথাসময়ে আমদানি না হলে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে করে পশুর দামের প্রভাব পড়ে ও মূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে করে যারা খামারি আছেন, তারা অধিক দাম দিয়ে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। এতে খামারিদেরও কিছু করার থাকে না। খামারিরাও চান কষ্ট করে পশু পালনের পর ভালো দাম পেতে। নয়তো তারাও পশু পালনে উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন।

খামারি মোবারক হোসেন বলেন, এবারও কোরবানির পশুর দাম বেশি হবে। কারণ, উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে পশু পালনকারীদের লাভের পরিমাণ কমার শঙ্কা রয়েছে। তারপরেও কেউ তো আর লোকসান দিয়ে পশু বিক্রি করবে না। কোরবানির হাট এখনো শুরু হয়নি। এখন পশু কম দামে পাওয়া গেলেও কোরবানির আগে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দামের আশা করছেন।

চাঁদপুর তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের বাবু মাল নামের একজন খামারি বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার আরো বেশি পশু লালনপালন হয়েছে। কোরবানির ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগ থেকে বিক্রির চেষ্টা করব। যদি না হয় এক সপ্তাহ আগে হাটে তুলব। আশা করছি, এবার ঈদে ভালো দাম আশা রয়েছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের কয়েকটি পশুর হাটের ইজারাদার বলেন, সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। কোরবানির হাট শুরু হতে দেরি আছে। তবে কোরবানির পশু হাটে কেমন পশু উঠবে, তা এখনি বলা সম্ভব নয়। ঈদের ১০ থেকে ১৫ আগে হাট জমে উঠবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক জানান, চাঁদপুরে বিগত বছরের ন্যায় এবারও পশু ক্রয়ে ভালো দাম পাবেন খামারীরা। যেহেতু উৎপাদন খরচ বেশি, এবার দামও কিছুটা বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।

কোরবানি উপলক্ষে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক কোরবানি পশু ক্রয় বিক্রয় করার বিষয়ে বলেন, ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো গরু দেখে শুনে ক্রয়ও বিক্রয় করতে হবে। যে সকল খামারি ও ব্যবসায়ী গরু বিক্রি করবেন, আপনারা অবশ্যই ভালো গরু বাজারে উঠাবেন। খোঁড়া ও অসুস্থ এবং রোগা গরু বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সম্পূর্ণ সুস্থ গরু বাজারে তুলতে হবে। এছাড়া যারা পশু ক্রয় করতে যাবেন, অবশ্যই আপনারা সুন্দন, ভালো, সুস্থ্য ও সাবলীল পশু দেখে শুনে ক্রয় করবেন। অসুস্থ, রোগা ও খোঁড়া পশু ক্রয় করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। তিনি আরো জানান, এবারের কোরবানি ঈদ উপলক্ষে পুরো চাঁদপুর জেলায় পশুর হাটে তাদের ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত