ধ্বংসের মুখে জীববৈচিত্র্যের নিরাপদ আশ্রয়স্থল

জাবির বন্ধ ক্যাম্পাসে গাছকাটার মহোৎসব

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জাবি প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গত ৩০ মে থেকে ২২ জুন পর্যন্ত টানা ২২ দিন গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ায় বন্ধ রয়েছে ক্যাম্পাস। এ সময়েই শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগে ফাঁকা ক্যাম্পাসে গাছকাটার মহোৎসবে মেতেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এক্সটেনশন ও নতুন প্রশাসনিক ভবনের পাশে কাটা হয় প্রায় দুই শতাধিক গাছ। এই দুই ভবন নির্মাণে আরো চার শতাধিক গাছ কাটা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এই দুটি স্থানে কেটে ফেলা গাছগুলোর ঠিক মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মেইন বার্ডস’খ্যাত লেকের অবস্থান, যেখানে প্রতি মৌসুমে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে। এছাড়া বড় একটি জায়গাজুড়ে প্রায় ৫০০ গাছ থাকায় অসংখ্য বন্যপ্রাণীর জন্য এটি একটি অভয়ারণ্য ছিল। ফলে এভাবে গাছকাটায় জীববৈচিত্র্যের একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের জন্য সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের এক্সটেনশন অংশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় চারুকলা বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। তাদের সহায়তায় ও প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে অন্দোলনের মুখে বন্ধ থাকা চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যদিকে শিক্ষকদের সর্বসম্মতিক্রমে কলা অনুষদের পাশেই ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের পাশে ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘ছুটি হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছকাটার সংস্কৃতি বহু পুরোনো। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শিক্ষার্থীরা হলে নেই এই সুযোগে গাছকাটার উৎসবে মেতেছে তারা। আজকে গাছকাটার সময় চারুকলা বিভাগ নিজেদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভবন নির্মাণে আমাদের আপত্তি নেই, আমাদের একটাই দাবি মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করা হোক।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক (একাংশ) ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, আমরা বলেছিলাম অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে তারপর ভবনের কাজে হাত দিতে। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে কিছু রদবদল আনলেও আমাদের মূল দাবিকে সব সময়ই উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রশাসন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার ফলে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অনুষদের ডিনদের দাবি জানিয়েছিলাম অংশীজনদের মতামত নিয়ে একাডেমিক বিল্ডিংয়ের কাজে হাত দিতে। আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট ডিনদের অনুরোধ করা সত্ত্বেও ছুটির ভেতর গাছে হাত দেয়া হয়েছে। তাই আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খো. লুৎফল এলাহী বলেন, ‘এভাবে ছুটির মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগে ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। কলা ও মানবিক অনুষদে আমাদের চাওয়া ছিল ভবনটি বর্তমান ভবন-সংলগ্ন স্থানে করার। এতে ভবন কিছুটা ছোট হলেও পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতির তেমন ক্ষতি হতো না। কিন্তু তারা সেদিকে কর্ণপাত না করে লেকের পাশে যে স্থান নির্ধারণ করেছে, তাতে তৃতীয় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পথকে উন্মোচন করল।’

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজ উদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের নির্ধারিত জায়গাতেই ভবন নির্মাণ করছি। পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কিছুই আমরা করছি না। এছাড়া যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেই গাছগুলো আমরা নিজেরাই রোপণ করে পরিচর্যা করব। সকল অংশীজনদের সুপারিশকে গ্রহণ করে এবং তাদের নিয়ে আমরা একটা টিম তৈরি করব, যাতে তারা আমাদের অগ্রগতিতে লক্ষ্য রাখতে পারেন।