কামবালাকে বাড়ি করে দিলেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

সড়ক পেয়ে খুশি এলাকাবাসী

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার ৯২ বছর বয়সি শ্রীমতি কামবালাকে বাড়ি উপহার দিলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এখন আর জরাজীর্ণ মাটির ঘরে আর থাকতে হবে না তাকে। তিনি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৮নং ধর্মপুর ইউনিয়নের গদাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নৌকার প্রচারে অংশ নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ৯২ বছর বয়সি এই বৃদ্ধা। এর আগে ভোটে জয় পেয়ে উপহার নিয়ে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন এ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

কামবালা তিন ছেলেকে নিয়ে থাকতেন জরাজীর্ণ মাটির বাড়িতে। ঘরের এক অংশে টিন থাকলেও অপর অংশে ছিল ছনের খড়। এতদিন ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে তাকে। এবার তার কষ্ট ঘুচল। নিজস্ব অর্থায়নে তাকে তিনটি পাকা বাড়ি করে দিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বাড়ি পাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত কামবালা বলেন, ‘মুই খুব খুশি হইচো, মোর বেটা মোক তিনটি বাড়ি বানায় দিছে।’

ভোটের আগে কালিয়াগঞ্জ বাজারে নির্বাচনি পথসভা করছিলেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বর্ষীয়ান কামবালা সেদিন শত শত মানুষের ভিড় ডিঙিয়ে একেবারে পৌঁছে যান খালিদের সামনে। ওই সময় নৌকার প্রার্থী খালিদের হাতে ১০ টাকার একটি নোট দিয়ে কামবালা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকায় খালিদ যেন ভোট দেন আর এই টাকাও যেন ভোটের কাজে খরচ করা হয়। খালিদ ছাড়াও সেখানে উপস্থিত অন্যদের কাছেও নৌকায় ভোট চান এই নারী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর দ্বিতীয়বারের মতো নৌ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেছেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ভোটের পর প্রথমবারের মতো নির্বাচনি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি প্রথমেই গিয়েছিলেন কামবালার বাড়িতে। নতুন বাড়ির ঘরে খাটে বসার অনুরোধ জানিয়ে কামবালা বলেন, ‘বেটা মোর ঘরত বসিলে হইচো।’ এ সময় চলতি ভাষায় দেওয়া উত্তরে খালিদ বলেন, ‘আমি তো তোর ঘরে বসবার জন্যই আইচ্চু।’ পরে প্রতিমন্ত্রী কামবালার ঘরে বসে আপ্পায়ন নেন।

উচ্ছ্বসিত কামবালা বলেন, ‘মুই কল্পনাও করিবার পরনি যে মুই বিল্ডিংগের ঘরত থাকিবার পারিম। মোর ছাওয়াল গুলা মানুষের জমিত ধান আবাধ করি যে টাকা পায়, তা দিয়ে কোনো মতে মোর বাড়ির লোকের পেটত খাবার জোটে আর ঘর বাড়ি তো দুরের কথা। মুই যেই পরিমাণ খুশি হইচো, তা কখনও ভাবিবাও পারিনাই। মোর জীবনে সবথাকি আজকা বেশি খুশি হইচো মোর সব বেটাগুলাক ঘরবাড়ি দি। অনেক অনেক ধন্যবাদ মোর বেটা মোক যে ঘরবাড়ি দিছে।’

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবনে একটি বিরল অভিজ্ঞতা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। আমি এতদিন রাজনীতি করেও যেটা শিক্ষা লাভ করিনি, আমাদের গদাবাড়ী গ্রামের ৯২ বয়সের এই বৃদ্ধা কামবালা আমাকে সেই শিক্ষা দিয়েছেন। একটি ভোট একটি এলাকার জন্য, একটি দেশের জন্য, সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা তিনি দেখিয়েছেন।’

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে কালিয়াগঞ্জ স্কুল মাঠে জানুয়ারির ৩ তারিখ নির্বাচনি প্রচারণা অংশ নিয়েছিলাম। সেই পথ সভাটি জনসভা রূপ নিয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে মা-বোনরা। সেই অনুষ্ঠানে এত মানুষের ভিড় ঠেলে কামবালা ভোট প্রার্থীকে না চিনে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমর্থন করেন, নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সভামঞ্চের দিকে এগিয়ে এসেছিলেন। প্রার্থীকে খুঁজে নিয়েছেন। তিনি সেই সময় তার যৎসামান্য সঞ্চয় তুলে দিয়েছেন।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার প্রতি কামবালা বেওয়ার অগাধ বিশ্বাস আছে। আমি যখন নৌকার তাকে (কামবালাকে) ব্যাচ পরিয়ে দিতে দিচ্ছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন- আমি এই প্রতীক চিনি, এই প্রতীক আমাকে চিনাতে হবে না। নৌকার মার্কার প্রতি তার অগাধ আস্থা, বিশ্বাস, তা দেখে একজন প্রার্থীও একজন ভোটারের কাছে পরাজিত হয়ে গেছে। কামবালার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি, কামবালা হচ্ছে ভোটার অব দ্য ইলেকশন। তিনি যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, এটা শুধু ভোটের বিষয় না, শিক্ষণীয় বিষয়। একটি ভোট একটি জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে। একটি ভোট একটি দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে পারে, একটি ভোট একটি জনগোষ্ঠীকে সমগ্র পৃথিবীতে জাগ্রত করতে পারে।

এর আগে ৮নং ধর্মপুর ইউনিয়নের গদাবাড়ী এলাকায় কামবালা নামে একটি নতুন সড়কের উদ্বোধন করে প্রতিমন্ত্রী। কামবালার নামে নতুন একটি সড়ক পেয়ে খুশি এলাকাবাসীও। স্থানীয় বাসিন্দা কুঞ্জু দাস বলেন, কামবালার উছিলায় আমাদের এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আমাদের একটা নতুন সড়ক করে দিয়েছেন, এতে আমরা খুবই খুশি। আগে বৃষ্টি হলে চলাচলে কষ্ট হতো। এখন আর সেই কষ্ট হবে না। গদাবাড়ীর এই সড়ক দিয়ে আমর তাড়াতাড়ি বিরল যেতে পারব।