সুসংবাদ প্রতিদিন
চাকরি ছেড়ে গড়েছেন গরুর খামার
মাসিক আয় ২ লাখ টাকা
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে গরুর খামার গড়েছেন রংপুরের তরুণ উদ্যোক্তা মনসুর আলী। সেই খামারের গরুর দুধ দিয়ে মিষ্টি বানিয়ে প্রতি মাসে আয় করছেন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। শুধু দুধ বা মিষ্টি নয়, খামার থেকে গরু বিক্রি করে বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় করছেন দিব্যি। মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে চাকরি ছেড়ে খামার দিয়ে এমন সফলতা পেয়েছেন মনসুর আলী। একসময় চাকরির সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও এখন মনসুর তার গরুর খামারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন অন্তত ১০ জন মানুষের। ভবিষ্যতে একেএম অ্যাগ্রো অ্যান্ড সুইটস নামে নিজ প্রতিষ্ঠানকে জেলার শ্রেষ্ঠ এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ইচ্ছাও রয়েছে তার। অথচ ৯ বছর আগেও নিজের কর্মের জন্য তিনি ছিলেন সর্বদা হতাশাগ্রস্ত। এখন সেই মনসুর আলী গরুর খামার থেকে মাসে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করছেন। সফল এই উদ্যোক্তা রংপুরের পীরগাছা উপজেলার নব্দীগঞ্জ এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে। রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। পড়াশোনা শেষে রংপুরের একটি বেসরকারি ইনস্টিটিউটে দুই বছর শিক্ষকতাও করেছেন মনসুর আল। পরবর্তীতে শিক্ষকতা ছেড়ে নিজের বাড়িতে বর্গা নেওয়া অন্যের দুটি গরু দিয়ে তিনি শুরু করেন গরুর খামার। এখন তার খামারে আছে ফ্রিজিয়ান জাতের ১৮টি গাভি। আলাপকালে তরুণ উদ্যোক্তা মনসুর আলী বলেন, আসলে চাকরি দিয়ে সৎভাবে থেকে তেমন কিছু করা সম্ভব নয়। তাই আমি চাকরি ছেড়ে খামারে মনোনিবেশ করেছি। এখন খামারে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার কন্সট্রাকসন রয়েছে। আমার বর্তমানে ১৮টি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু রয়েছে। এসব গাভি থেকে প্রায় ১৫০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ সংগ্রহ হয়। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে প্রতি মাসের খরচাপাতি বাদ দিয়ে আমার আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা থাকছে। এটা আমার নিজের জায়গায় তৈরি করা খামার। এ কারণে খামারের জায়গা-জমির জন্য আলাদা কোনো খরচ নেই। প্রতি বছর গরু বিক্রি করে আলাদা আরো ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় করতে পারছি। সবমিলিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে আর নিজের চেষ্টায় একটা ভালো পর্যায়ে আছি। খুব বেশি ভালো লাগে যখন দেখি এবং শুনি নতুন খামারিরাও আমার সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
মিষ্টি তৈরি প্রসঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিষ্টি তৈরির জন্য মনসুর প্রথমে নিজের খামার থেকে সংগ্রহ করেন গরুর খাঁটি দুধ। এরপর সংগ্রহ করা দুধ ভালোভাবে ছেঁকে তোলা হয় বড়পাত্রে। চুলাতে তা জ্বাল করা হয় উত্তপ্ত। এরপর উত্তপ্ত দুধ থেকে তৈরি হয় ছানা। পরে ছানাগুলোকে দেওয়া হয় মিষ্টি আকার। এরপর এগুলোকে উত্তপ্ত চিনির শিরায় ঢালতেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু মিষ্টি। নিজের তৈরি মিষ্টি পাইকারিভাবে বিক্রি করতে স্থানীয় নব্দীগঞ্জ বাজারে একেএম সুইটস নামে একটি মিষ্টিভান্ডার চালু করেছেন মনসুর আলী। খামারের নির্ভেজাল দুধ আর দক্ষ কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি মিষ্টির সুনাম এখন পুরো জেলাজুড়ে। এছাড়া নব্দীগঞ্জ বাজারে গো-খাদ্য এবং ভেটেরেনারি ওষুধের প্রতিষ্ঠান খুলেছেন মনসুর। তাকে এসব কাজে সহযোগিতা করেন তার বড় ভাই আব্দুর করিম ও বাবা আলাউদ্দিন। মনসুর আলী জানান, ২০১২ সালে নিজের বাড়িতে বর্গা নেওয়া অন্যের দুটি গরু দিয়ে শুরু করা খামারে এখন ফ্রিজিয়ান জাতের গাভীর সংখ্যা ১৮টি। সবগুলো গাভি দুধ দিতে সক্ষম। এছাড়া প্রতি বছর এসব গরুর বাছুর থেকে ২০ থেকে ২৫টি করে গরু বিক্রি করেও মোটা অঙ্কের টাকা আয় করছেন তিনি। এই আয় দিয়ে বর্ধিত করছেন খামারের পরিধিও। গরুর পরিচর্যা থেকে শুরু করে সব কাজের অগ্রভাগে থাকেন তিনি নিজেই। তবে গরুর পরিচর্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে গত এক বছর ধরে খামারের গাভীর দুধ দিয়ে মিষ্টি, দই আর ঘি তৈরি করে বাজারজাত করছেন সফল এই উদ্যোক্তা। তিনি আরো বলেন, খামারের গাভির দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ না বিক্রি করে মিষ্টি আর দুই তৈরি করছি। এতে দুধের লাভের চেয়ে লিটারে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হয়। নিজের উৎপাদিত এসব মিষ্টি, দই ও ঘি বিক্রি থেকেও প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। এদিকে মনসুরের এমন সাফল্য দেখে শুধু উদ্যোক্তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এমনটা নয়। তার প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়ায় খুশি বেকার যুবকরাও। একই সঙ্গে ছেলের এমন সাফল্য দেখে বাবা আলাউদ্দীনও বেশ খুশি। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনিও ছেলেকে সহযোগিতা করে চলেছেন। এই প্রতিবেদনকে মনসুরের বাবা আলাউদ্দিন জানালেন, তার ছেলেরা ভালো ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। তাদের গরুর খামার রয়েছে। মিষ্টির দোকানসহ আরও দুটি নতুন ব্যবসা রয়েছে। আল্লাহর রহমতে খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে তার ছেলে মনসুর। ব্যবসার পরিধি বাড়ার সঙ্গে এলাকায় সুনাম বাড়ছে বলেও জানান তিনি। স্থানীয় সংগঠক ও তরুণ উদ্যোক্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, এখন যুব সমাজের একটা ব্ড় অংশ চাকরির পেছনে ছুটছে। নিজেদের অল্প পরিশ্রমে বড় অবস্থানে নিতে চায়, কেউ কেউ আবার বৃত্তবানও হতে চায়। আমি মনে করি এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে মনসুর আলীর মতো নিজে থেকে কিছু করে দেখানোর চেষ্টা থাকাটাই এখন বেশি জরুরি। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে যদি নিজের ভালো থাকাটা সৎভাবে হয়, তাতে প্রশান্তি রয়েছে। যেটা মনসুর আলী শিক্ষকতা চাকরি ছেড়েও নিজে খামার করে দৃষ্টান্ত গড়েছেন।