কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে এই প্রথমবারের মতো মো. জয়নাল আবেদীন (৫৫) নামের এক দরিদ্র রোগীর কণ্ঠনালির ক্যান্সারের টোটাল ল্যারিঞ্জেক্টমি অস্ত্রোপচার হয়েছে। গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে এ অস্ত্রোপচারে সফলতার মধ্যদিয়ে উন্নত চিকিৎসাসেবায় কুমেক হাসপাতাল এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন কুমেক হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান। রোগীর পরিবার ও কুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি পেশায় একজন অটোচালক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথায় ভুগছিলেন। এতে ওই রোগী তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশাটিও বিক্রি করে চিকিৎসা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি কণ্ঠনালির তীব্র ব্যথা নিয়ে কুমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ডান কণ্ঠনালিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। তবে তার ক্যান্সারটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় তাকে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে রেডিওথেরাপি নেয়ার জন্য রেফার করা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে এমন জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসা করার মতো টাকা নেই এই অটোচালকের। তাই তিনি বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে অবস্থান করেন। এতে তার ক্যান্সারটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদিকে ২ বছর ৩ মাস পর সংকটাপন্ন অবস্থায় গত মার্চ মাসে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি ফের এ হাসপাতালে এসে নাক, কান ও গলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তার জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে ট্রাকিওস্টোমি টিউব পড়ানো হয়। গত সোমবার কুমেক হাসপাতালে তার কণ্ঠনালির ক্যান্সারের সফল অস্ত্রোপচার করেন ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এএইচএম দেলোয়ার মামুনের তত্ত্বাবধানে এ টিমে ছিলেন ডা. রিফাত, ডা. বেলাল ও ডা. তসলিম। এদিকে এই প্রথমবারের মতো কণ্ঠনালির ক্যান্সারের সফল অস্ত্রোপচারে উচ্ছ্বসিত এ হাসপাতালের পরিচালকসহ সকল চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীর স্বজনরা। গতকাল ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রোগীর কণ্ঠনালির ক্যান্সার জটিল আকার ধারণ করেছে এবং এর বৃদ্ধি অনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় তাকে এ হাসপাতালে কণ্ঠনালির টোটাল ল্যারিঞ্জেক্টমি অপারেশন করা হয়েছে। রোগী ভালো আছে। এই চিকিৎসার জন্য কোনো রোগীকে এখন আর ঢাকা বা বিদেশে যেতে হবে না।