ঘূর্ণিঝড় রিমাল

জলোচ্ছ্বাসে লবণ পানিতে তলিয়েছে সুন্দরবনের ৮০ মিঠা পানির পুকুর

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের ভেতরের প্রায় ৮০টি মিঠা পানির পুকুর লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে সুন্দরবনে এখন সবচেয়ে বড় সংকট স্বাভাবিক পানি। কেন না, বন্যপ্রাণী, বনজীবী এবং বনে অবস্থান করা বনকর্মীদের মিঠা পানির একমাত্র উৎস ছিল এসব পুকুর। যার সবই এখন নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রিমাল-পরবর্তী পরিস্থিতি ও জরুরি করণীয়’ শীর্ষক সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এ সভার আয়োজন করে।

সভায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতায় বাংলাদেশের অবদান মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২০১টি বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এটি এ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট সৃষ্টি করেছে। এ ঘূর্ণিঝড়ে জনপদের পাশাপাশি পায়রা নদীর ড্রেজিং ও উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় ও এর আশপাশের ১৯টি জেলার ১১৯ উপজেলার ৯৩৪ ইউনিয়নের প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।

সভায় মৎস্য সম্পদ বিশেষজ্ঞ ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, লবণাক্ত পানির আগ্রাসন ঠেকাতে না পারলে পুরো জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের ফলে যেসব মিঠা পানির পুকুরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে, সেগুলো দ্রুত অপসারণ করতে হবে। না হলে মিঠা পানির পুকুরে থাকা মাছ মারা যাবে। পরে দীর্ঘসময় জুড়ে এর প্রভাব পুরো দেশের মৎস্য খাতে পড়বে। এসব বিষয়কে জরুরি ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিয়ে উপকূলের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। এতে ক্ষতির বিপরীতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।

জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে রিমালের প্রভাবে প্রাণহানি কম হয়েছে উল্লেখ করে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (সাতক্ষীরা) লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দরিদ্রতা, দীর্ঘমেয়াদি লবণাক্ততার কারণে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট উপকূলীয় এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ পরিস্থিতিতে ওই এলাকাকে বিশেষ এলাকা বা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। আলোচনায় অংশ নেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, মৎস্য সম্পদ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুল।