সুসংবাদ প্রতিদিন
চরের লাল মরিচে কৃষকের হাসি
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
গাইবান্ধার ফুলছড়িসহ পুরো জেলায় রয়েছে প্রায় শতাধিক চর। এসব চরে উৎপাদিত ফসলের মধ্যে মরিচ যেন কৃষকের প্রাণ। চরে চাষ হওয়া মরিচ প্রতি সপ্তাহে দুদিন গাইবান্ধা জেলার পুরাতন ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের পাশে অবস্থিত হাটে কেনাবেচা হয়। চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে চাষ হওয়া এসব মরিচের মূল্য প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন এখানকার কৃষকরা। ফুলছড়ির মরিচের হাট ঘুরে দেখা গেছে, লাল টুকটুকে মরিচে সাজানো দৃষ্টিনন্দন বিশাল মরিচের হাট। সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বসে এ হাট। এর আগের রাত থেকেই চরের মরিচ নিয়ে চাষিরা আসতে শুরু করেন। নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়িতে করে চর থেকে মরিচ বিক্রি করতে আসেন কৃষক ও পাইকাররা। এরপর শুরু হয় বেচাকেনার হাঁকডাক। বেলা বাড়ার সঙ্গে বেড়ে যায় ক্রেতা-বিক্রেতার ছোটাছুটি ও ব্যস্ততা। প্রতি হাঁটে প্রায় ১ হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়। শুকনো মরিচ কিনে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। বস্তা বোঝাই হয়ে মরিচ বিভিন্ন যানবাহনে করে চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চরে প্রায় ৩২ রকমের ফসলের আবাদ হয়। এর মধ্যে মরিচ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। আগে অল্প জমিতে দেশি মরিচ চাষ করলেও এখন হাইব্রিড জাতের মরিচ বাজারে আসার কারণে মরিচ চাষে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন কৃষকরা। উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের কৃষক সোবাহান মিয়া বলেন, এ বছর ৬ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় লাভ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, দেশি জাতের মরিচ চাষে তেমন লাভ হতো না, এখন হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষের কারণে কৃষকরা প্রতি বিঘায় লাখ টাকার বেশি আয় করছে। আগে চরে সেচের ব্যবস্থা ভালো ছিল না, সে জন্য তেমন কোনো অর্থকারী ফসল উৎপাদন করা যেত না। তখন আউশ ধান, বাদাম ও মুসুর ডাল চাষ হতো। এখন চরে সেচের ব্যবস্থা উন্নতির কারণে অনেক অর্থকারী ফসল উৎপাদন হচ্ছে তার মধ্যে মরিচ ও ভুট্টা অন্যতম। ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিন্টু মিয়া বলেন, চরে এখন অনেক অর্থকারী ফসল উৎপাদন হচ্ছে। কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, রাসায়নিক সার বিতরণ, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এতে করে তারা লাভবান হচ্ছেন। সারা দেশে এ উপজেলার শুকনো মরিচের সুনাম রয়েছে। এই উপজেলার মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। ফুলছড়ি উপজেলা ছাড়াও গাইবান্ধা জেলার প্রতিটি চরে দিন দিন মরিচ চাষ হয়।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, এই জেলায় প্রায় ১৬৫টির মতো চর রয়েছে। যেসব চরে সেচের ব্যবস্থা ভালো সেসব চরে মরিচ চাষ ভালো হচ্ছে। ধান চাষের চেয়ে মরিচ চাষে কৃষকরা লাভবান বেশি হয়। ভুট্টা ও মরিচ গাইবান্ধার কৃষকদের প্রাণ। মরিচ চাষে সেচ ব্যবস্থা কম হলেই হয়, তাই এ চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহী। চর অঞ্চলে স্থায়ীভাবে সেচ ব্যবস্থা করতে পারলে আরও বেশি করে ফসল ফলানো সম্ভব। তিনি বলেন, এ বছরে গাইবান্ধার চর অঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টরের অধিক জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এর বাজারমূল্য আনুমানিক ১৫০-১৯০ কোটি টাকা। জেলার ৪টি উপজেলার চরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণে মরিচ উৎপাদন হয়। মরিচ বিক্রির একমাত্র হাট বসে ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদী সংলগ্ন ফুলছড়ি মরিচের হাট। প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার এই হাটে মরিচ কেনাবেচা চলে। প্রতি হাটে প্রায় ১ হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যায়।