পীরের নির্দেশে মৃত্যুর আগেই কবর তৈরি করে পাকা করেছেন ভাজন আলী-অবিরন নেছা দম্পতি। মৃত্যুর পর সেখানেই দাফন করার অসিয়ত করেছেন পরিবারের সদস্যদের। ঘরের ভেতর কবর খুঁড়ে ১২ বছর ধরে মৃত্যুর অপেক্ষায় শত বছর বয়সি এ দম্পতি। কবর খননের বিষয়টি রীতিমতো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের এলাকার মানুষও আসছে দেখার জন্য। কী কারণে তিনি জীবিত অবস্থায় নিজের কবর খুঁড়েছেন, সেটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে জেগেছে কৌতূহল। এ দম্পতির বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের উত্তর ভাটিয়া পাড়া গ্রামের মৃত ঈমান আলীর ছেলে মো. ভাজন আলী ও স্ত্রী মোছা. অবিরন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ১০১ হলেও ভাজন আলীর দাবি, তার বয়স ১১৫ বছর। পীরের নির্দেশে মো. ভাজন আলী বলেন, যুদ্ধের ২ বছর পরে বাবার মৃত্যু হয়। এর আগে তিনি কবরের জায়গা নির্ধারণ করে দেন। তিনি বলে গেছেন, আমার পাশে তোমাদের দুজনের যেন কবর দেয়া হয়। মুহাম্মদ ছাইফুদ্দীন নকশাবন্দী মুজাদ্দেদী এনায়েতপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ময়মনসিংহ শম্ভুগঞ্জি পীরের মুরিদান ভাজন আলী। তরিকার খেলাফতের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে।
ভাজন আলী বলেন, পীর বাবা বলে গেছেন কবর খুঁড়ে মাজার করে রাখতে। পরে গত ১২ বছর আগে স্ত্রীসহ নিজের কবর খুঁড়ে রেখেছি। ভাজন আলীর পঞ্চগড়ে সাড়ে ৩০০ মুরিদান রয়েছে তিনি নিজেকে পীর বলেও দাবি করেন। কবর খোঁড়ার পর কবরের চারপাশে পাকা করে মাজার করা হয়েছে। পাশের ঘরে নামাজ আদায় মিলাদ মাহফিলসহ বসবাস করেন। ভাজন আলী আরও বলেন, মৃত্যুর পর আমার স্বজনরা যাতে বাড়ির পাশের খননকৃত কবরে আমাকে দাফন করে, সে কথাও তাদের বলে যাচ্ছি সব সময়। সন্তানদের বিষয়ে জানতে চাইলে মোছা. অবিরন বলেন, তাদের তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। সবার বিয়ে হয়ে অন্যত্র থাকে। ছেলে আব্দুল জলিল বলেন, পীরের ইচ্ছায় আমার বাবা-মা ঘরের ভেতর কবর খুঁড়ে রেখেছেন। শুনেছি দাদাও বলে গেছেন তার পাশে যেন তাদের কবর হয়।
সরকার পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মৃত্যুর আগে কবর খুঁড়ে রাখার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আমিও দেখতে গিয়েছিলাম। তবে কী কারণে কবর খুঁড়ে রেখেছেন তা জানতে পারিনি। মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ বলেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি সঠিক নয়। মৃত্যুর পর তার স্বজনরা কবর খুঁড়ে দাফন-কাফন করবে এটাই বাস্তব। তবে জায়গা নির্ধারণ করে দিতে পারেন। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কবর তৈরির বিষয়টি রীতিমতো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু আমাদের গ্রামের নয়; বিভিন্ন এলাকার মানুষও আসছে দেখার জন্য।