ভুয়া ডাক্তারের চিকিৎসায় স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রীর মামলা

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কিডনি সমস্যার ভেষজ চিকিৎসার নামে থাইল্যান্ডে ডেকে নিয়ে মো. এনায়েত হোসেন নামে নারায়ণগঞ্জের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হত্যার শিকার ব্যক্তির স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন। মামলা নং-৩০৮/২৪। মামলায় ভুয়া ডা. মুজিবর রহমানসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় বাদী তাহমিনা আক্তার জানান, আমার স্বামী শারীরিকভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক সকল কাজ কর্ম করছিলেন। তার সামান্য কিডনি সমস্যা ছিল, এছাড়া হার্টের কোনো সমস্যা ছিল না। তাকে চিকিৎসার নামে থাইল্যান্ড নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। থাইল্যান্ডে আমার স্বামীকে চিকিৎসার নামে অত্যাচার করা হয় এবং এক পর্যায়ে আমার স্বামী পানি চাইলে তাকে পানি দেওয়া হয়নি। এমনকি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য আশপাশের কোনো হাসপাতালেও নেয়া হয়নি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই, আর কোনো স্ত্রী যেন স্বামী হারা না হয়, কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়, কোনো সন্তান যেন এতিম না হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ বন্দরে কেওঢালা এলাকার বাসিন্দা মোঃ এনায়েত সামান্য কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে মুজিবরের দালাল বাহিনীর সদস্য মোঃ রাসেল ও মনিরুল ইসলাম নামে দুজন তাকে জানায় যে, মুজিবর রহমান নামে এক ডাক্তারের চিকিৎসা নিলে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন। দালালদের সাথে এনায়েত গত বছরের ২৬ মে মুজিবরের রাজধানীর শান্তিবাগের বাসায় যান। মুজিবর রহমান তাকে কিছু লতাপাতার ওষুধ দেন এবং সমস্যা হলে তিন দিন পর দেখা করতে বলেন। কিন্তু লতাপাতার কোনো কার্যকারিতা না দেখে ২৯ মে পুনরায় মুজিবর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে এ সময় দালাল রাসেল ও মনিরুল জানায়, এখানে চিকিৎসা করালে তেমন কোনো চিকিৎসা পাওয়া যাবে না বরং আপনি থাইল্যান্ডে যান এবং সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে দেশে আসতে পারবেন। দালালদের কথায় এনায়েত রাজি হয়ে থাইল্যান্ডে যান। সেখানে জীবন দিতে হয় তাকে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুজিবর রহমান এমবিবিএস পাশ করেননি, ছাত্রাবস্থায় তিনি রাশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টেসের মালামাল পাঠাতেন। এরপর রাশিয়ায় ইলেকট্রনিক্সের ব্যাবসা করেন, বাংলাদেশেও আকিরা নামে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা ছিল তার। রাশিয়ায় প্রতারনার দায়ে সে দেশের সরকার তাকে বের করে দেয় এবং সে থাইল্যান্ডের পাতায়ায় এসে চিকিৎসার নামে ভন্ডামির আস্তানা তৈরী করে। সেখানে থাইল্যান্ডের কোন লোক চিকিৎসা নেয় না। যা শুধুমাত্র বাসাবাড়ি, যেখানে মুজিবর রহমানের নামে কোন সাইনবোর্ড নেই, ডাক্তার হিসেবে কোন লেখাও নাই অথচ তিনি নিজেকে ইউটিউবে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেন। দালালরাও উন্নত চিকিৎসার কথা বলে সেখানে বাংলাদেশ থেকে অসহায় নিরীহ রোগীদের নিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, ডা. মুজিবর রহমান নামে এক ব্যক্তি থাইল্যান্ডে ভেষজ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সেখানে তার একটি ক্লিনিক রয়েছে বলে ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচার চালান এবং তার নিয়োগকৃত দালাল চক্রের মাধ্যমে তিনি থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখান যে, সেখানে গেলে সব রোগের চিকিৎসা হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ইউটিউবে তার অনেক ভিডিও কন্টেট রয়েছে। ঢাকার শাহজাহানপুরের শান্তিবাগে তার চেম্বার ছিল, সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে থাকাকালে পোস্টাল অফিসার্স কোয়ার্টার, মতিঝিলে রোগী দেখতেন।

অভিযোগের বিষয়ে ডা. মুজিবর রহমানের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।