বিশ্ববাজারে সুনাম কুড়িয়েছে সাতক্ষীরার সুসাধু আম

চলতি মৌসুমে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৩০০ টন

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা

বিগত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরার সুস্বাদু আম বিশ্ববাজারে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ইউরোপের বাজারে রপ্তানি শুরু হয়েছে আম। ইংল্যান্ড, সুইডেন ও ইতালিতে যাচ্ছে এখানকার সুস্বাদু হিমসাগর ও গোবিন্দভোগ আম। গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৫০ টন রপ্তানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

ভৌগোলিক কারণে অন্য জেলার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে সাতক্ষীরার আম পাকে। তাই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রপ্তানি বাজারে বিশেষ গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি ও গোবিন্দভোগ।

আম রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, ইউরোপের বাজারে সাতক্ষীরার হিমসাগর আমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে এসব আম। চলতি মৌসুমে ইংল্যান্ড, সুইডেন ও ইতালিতে ৩০০ টন রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাতক্ষীরা থেকে হিমসাগর ছাড়াও রপ্তানিযোগ্য আমের মধ্যে রয়েছে ল্যাংড়া, আম্রপালি ও গোবিন্দভোগ। চলতি মৌসুমে ৩০০ টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ১৩০ টন বেশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানায়, জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার মেট্রিক টন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৮ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরে ১৬০ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত আমবাগানের সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজার ২৯৯টি। এ ছাড়া ১৩ হাজার ১০০ জন তালিকাভুক্ত চাষি রয়েছেন।

রপ্তানিযোগ্য আমচাষি রফিকুল ইসলাম ও সাইদুর রহমান জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩ বছর ধরে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করছেন তারা। চলতি মৌসুমেও ৫০ শতাংশ জমিতে ৫০টি হিমসাগর গাছ থেকে আম উৎপাদন করেছেন। এসব গাছে ৮ টন আম উৎপন্ন হলেও রপ্তানি হয়েছে ৩ টন।

তারা আরো জানান, প্রতি টন আম ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা দামে বিক্রি করেছেন। তবে গত মৌসুমের তুলনায় দাম ভালো পেয়েছেন। গত বছর ৫ টন আম বিক্রি করেন, যার দাম ছিল প্রতি টন ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে আমের ভালো দাম পাওয়া গেছে। তবে অনাবৃষ্টি ও খরায় আম আকারে ছোট হয়ে যাওয়ায় রপ্তানির চাহিদা পূরণ হয়নি। আম চাষিরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরায় আমের ফলন কম হচ্ছে। এছাড়া প্রচণ্ড খরার কারণে আম আকারে বড় না হওয়ায় চলতি মৌসুমে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয় দেখা দিতে পারে।

আম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তাসিন এন্টারপ্রাইজের সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হযরত আলী বলেন, ইউরোপের বাজারে সাতক্ষীরার হিমসাগর আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে সে অনুযায়ী আম সংগ্রহ করা মুশকিল।

তিনি আরো বলেন, ইউরোপের বাজারে যে আম যায়, তা মানসম্মত হতে হবে। এসব আম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাষিদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ইংল্যান্ড ও ইতালিতে আম রপ্তানি করেছি।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আম রপ্তানি বাড়াতে সরকার রপ্তানিযোগ্য উৎপাদন নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে আম চাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণ, উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি সরবরাহ, সার, সেচ ব্যবস্থা ও বালাইনাশক স্প্রেসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দেওয়া হয় বিনামূল্যে।

তিনি আরো বলেন, তাছাড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান যাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি আম সংগ্রহ করতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এর আগে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলার প্রায় ৩০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।