আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যর আমদানি অব্যাহত আছে। দেশের পাইকারি ব্যবসায়ীদের পণ্য সংগ্রহের ডিপো বলা চলে এ খাতুনগঞ্জকে। খুচরা ব্যবসায়ীরাও তাদের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীক লেনদেন এখান থেকে করে থাকেন। পেঁয়াজ, রসুন, আদা থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্যের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। কোরবানিকে সামনে রেখে দেশের বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজের কদর। শৌখিন রসনাবিলাসীদের প্রথম পছন্দ বেশি ঝাঁজের দেশি পেঁয়াজ। আকারে বড় দেখতে সুন্দর এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় চট্টগ্রামে রাজত্ব করতো ভারতের পেঁয়াজ। কিন্তু এবার কোরবানির বাজারে খাতুনগঞ্জে রাজত্ব করছে দেশি পেঁয়াজ। আগামী ১৭ জুন ঈদুল আজহা। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে এমন দিনে আড়তে প্রচুর বেচাকেনা থাকলেও এবার বেচাকেনায় ভাটা।
এর পেছনে অনেক কারণ জানালেন আড়তদাররা। অন্যতম কারণ হচ্ছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, ডলারের দাম বাড়ায় বিভিন্ন খাতে প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া চৌধুরী হাট, শান্তিরহাট, দোহাজারী, পাহাড়তলী, রামু, কক্সবাজার, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজের আড়ত গড়ে উঠছে। মেসার্স রহিমা স্টোরের স্বত্বাধিকারি মো. ইউনুছ জানান, মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতা কম। ভারতীয় পেঁয়াজ ছোট ৬২ থেকে বড় ৭০ টাকা। মেসার্স সাহারা ট্রেডার্স মোহাম্মদ আজগর জানান, পাবনার পেঁয়াজ আছে আমাদের আড়তে। কেজি ৬৬ টাকা। গতকালের চেয়ে এক টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজে সরকারের বিশেষ নজর আছে। ভারতের পেঁয়াজ আমদানির পথ খোলা আছে। দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়লে আমদানি বেড়ে যাবে। ফলে বাজারে অযৌক্তিক অস্থিরতা হওয়ার সুযোগ নেই। কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, রাজশাহীর পেঁয়াজ আছে আড়তে। সুবিধা হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ সহজে পচে না। তিনি জানান, আড়তদার কেজিতে ৭০ পয়সা কমিশন পায় বেপারির কাছ থেকে। ৩০ পয়সা ক্রেতা দেবে। লেবার খরচ ১২ থেকে ১৫ টাকা।
আজম হাবীব নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ভারতের বড় পেঁয়াজের দাম চাওয়া হচ্ছে ৭০ টাকা। কিন্তু চাহিদা কম। দেশি পেঁয়াজের দাম কম ও মান ভালো হওয়ায় চাহিদা বেশি। দেশি পেঁয়াজের বস্তায় পচা-গলা কম। ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। স্পেশাল বড় পেঁয়াজ ৬৮ টাকা। চীনা রসুন ১৮৪, দেশি রসুন ১৭৫ টাকা। আল আরব বাণিজ্যালয়ে চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২০৫ টাকা। পাইকারি পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. আশিক নামে এক ব্যবসায়ী জানান, এক দিন পর পর ৩৫ থেকে ৪০ বস্তা পেঁয়াজ নিয়ে যান। দুই দিনে দুই টাকা বেড়েছে। এবার দেশি পেঁয়াজ চলছে বেশি। পচা-গলা নাই বললেই চলে। প্রতি কেজিতে ২ টাকা খরচ পড়ে। খুচরায় মুদির দোকানে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০, রসুন ২০০, আদা ২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। রিকশাভ্যানে তুলনামূলক দাম কিছুটা কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানি উপলক্ষ্যে পেঁয়াজের বাজার যাতে অস্থিতিশীল না হয়, সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি রাখা জরুরি। সঠিকভাবে বাজার তদরকি না করতে পারলে অসাধু চক্র নানা কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। বেশি মুনাফা লাভের আশায় সিন্ডিকেট যাতে তৈরি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যাতে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে না পারে, সে ব্যাপারে তৎপরতা বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান হয়েছে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে।