গাজায় ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির অভিযানে ২১০ ফিলিস্তিনি নিহত
হোয়াইট হাউজের কাছে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
চার জিম্মি মুক্তির নামে মধ্য গাজার দেইর আল বালাহ ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। শনিবারের এ হামলায় অন্তত ২১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। আহত হয়েছে চারশোর বেশি মানুষ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) এক চিকিৎসক বলেছেন, মধ্য গাজার আল-আকসা হাসপাতাল যেন এক দুঃস্বপ্ন। এখানে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আল-আকসা ও নাসের হাসপাতালে হাজারো গুরুতর আহত রোগীদের চিকিৎসা চলছে। জনাকীর্ণ হাসপাতালের ভেতরে রোগীদের আহাজারি শোনা যাচ্ছে। আহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
হামলার পর শরণার্থী শিবিরজুড়ে মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, প্রতি মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে। সবাই মরে গেছে। আমরা তৃতীয়বারের মতো বাস্তুচ্যুত হয়েছি। এখন কোথায় আশ্রয় নিব জানি না।
একযোগে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে চালানো এ হামলার হামলার জেরে গাজার লাখো উদ্বাস্তুর মধ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, নুসেইরাত শিবিরে হামলা চালিয়ে চার জিম্মিকে মুক্ত করেছে তারা। অভিযান চলাকালে তাদের এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। হামাস জানিয়েছে, নুসেইরাতে অভিযানে বন্দিদের হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে মৃতের সংখ্যা জানায়নি তারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আল-আকসা হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক আহত মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু হাসপাতালে খাবার ও ওষুধের অভাব রয়েছে। এছাড়া জ্বালানির অভাবে এর প্রধান জেনারেটরও কাজ করছে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, রাস্তায় এখনো অনেক মৃতদেহ পড়ে আছে। আহত অনেক মানুষও রাস্তায় পড়ে থাকে। গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৩৬ হাজার ৮০১ ফিলিস্তিনি। আহত কমপক্ষে ৮৩ হাজার ৬৮০ জন।
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান ফরাসি প্রেসিডেন্টের
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং একটি রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় সফরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে বৈঠককালে গত শনিবার তিনি এ আহ্বান জানান।
একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘নয় মাস সংঘাতের পর, রাফাহ পরিস্থিতি এবং মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা অগ্রহণযোগ্য।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কয়েক মাস ধরে দাবি জানানো সত্ত্বেও এটা অসহনীয় যে ইসরায়েল মানবিক সাহায্য প্রবেশের সমস্ত ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ রেখেছে।’
বাইডেন বলেছেন, তারা সব জিম্মিকে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন।
ফ্রান্সের নরম্যান্ডি অবতরণের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নরম্যান্ডি উপকূলে মিত্রবাহিনীর অবতরণ) ৮০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণের দুই দিন পরে ফ্রান্সে বাইডেন তার রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেন।
ইসরায়েলের কাছে কলম্বিয়ার কয়লা বিক্রি স্থগিত
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে মারাত্মক যুদ্ধের বিরুদ্ধে তিরস্কার হিসেবে তার দেশ থেকে ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি স্থগিত ঘোষণা করেছেন। শনিবার তিনি এ ঘোষণা দেন। বোগোটায় ইসরায়েলি দূতাবাস বলেছে, মে মাসে পেট্রোর সরকার ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পরও কয়লা রপ্তানি চালু ছিল। কলম্বিয়া ২০২৩ সালে ইসরায়েলে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের কয়লা রপ্তানি করেছে, কলম্বিয়া ইসরায়েলের প্রধান কয়লা সরবরাহকারী।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচক, কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থি প্রেসিডেন্ট পেট্রো শনিবার এক্স-এ বলেছেন, ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত’ ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি স্থগিত থাকবে। একটি সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জারি করা অস্থায়ী ব্যবস্থার আদেশ সম্পূর্ণরূপে মেনে না চলা পর্যন্ত’ নিষেধাজ্ঞাগুলো জারি থাকবে।
মে মাসের শেষের দিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার আনা একটি মুলতুবি মামলার অংশ হিসেবে আইসিজে ইসরায়েলকে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে তার আক্রমণ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়, পাশাপাশি জিম্মিদের মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে মানবিক সাহায্যের ‘নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের বিধান’ মেনে চলার নির্দেশ দেয়।
কলম্বিয়ান সরকারের ঘোষণায়, কয়লা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার পাঁচ দিন পরে কার্যকর হবে এবং ইতিমধ্যে চালানের জন্য অনুমোদিত পণ্যগুলোকে প্রভাবিত করবে না। বোগোটা কয়লার ভূমিকাকে ‘অস্ত্র তৈরি, সৈন্য সংগঠিত করা এবং সামরিক অভিযানের জন্য একটি কৌশলগত সম্পদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। পেট্রো আরো বলেছেন, কলম্বিয়া ইসরায়েলের তৈরি অস্ত্র কেনা বন্ধ করবে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী ইসরায়েল।
এদিকে হোয়াইট হাউসের কাছে শনিবার হাজার হাজার লোক গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে ‘রেড লাইন’ বিক্ষোভ করেছে। তারা হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী হামলার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সহনশীলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলির বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনীদের নাম লেখা দীর্ঘ ব্যানার বহন করছিল। এদিকে ইসরায়েল গাজা যুদ্ধে দ্বিমুখো নীতির জন্য সমালোচিত হচ্ছেন বাইডেন। গত মে মাসে হোয়াইট হাউস বলেছিল, রাফায় ইসরায়েলি হামলা ‘রেড লাইন’ বা চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেনি। এর দুই মাস আগে বাইডেন রাফায় ‘রেড লাইন’ অতিক্রম না করতে ইসায়েলকে সতর্ক করেছিল।
ভার্জিনিয়ার ২৫ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী জায়েদ মাহদাবি বলেছেন, ‘আমি বাইডেনের কোনো কথাই আর বিশ্বাস করি না। বাইডেনের ‘রেড লাইন’ এর বিষয়টি তার ভন্ডামি ও কাপুরুষতা।’
নার্সিং সহকারী তালা ম্যাককিনি (২৫) বলেন, ‘আমরা সবাই আশা করি, এটি শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে স্পষ্টত আমাদের প্রেসিডেন্ট যেসব কথা বলেছেন, তা মেনে চলছেন না। এটা আপত্তিজনক।’
বিক্ষোভে অংশ নেয়া সবাই প্রায় লাল পোশাক পরেছিল। তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনি পতাকা। তারা বলেছিল- ‘বাইডেনের ‘রেড লাইন’ মিথ্যা’ এবং ‘শিশুদের ওপর বোমা হামলা চালানো আত্মরক্ষা নয়’। এদিকে এই বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর পাঁচ মাস বাকি। নির্বাচনে বাইডেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হচ্ছেন। মুসলিম ও তরুণ ভোটারদের কারণে চাপে রয়েছেন বাইডেন। তাই এবারের মার্কিন নির্বাচনকে গণতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। ম্যাককিনি বলেন, ‘এটি খুবই হতাশাজনক যে আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি কথা রাখেন না। আমি তৃতীয় পক্ষকে ভোট দেব’।