আসন্ন ঈদুল আজহার আগেই নিজ ঘরে উঠছেন সাড়ে ১৮ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার। জমিসহ পাকাঘর পাচ্ছেন তারা। ঘর পেয়ে মাথাগোঁজার স্থায়ী ঠাঁই হবে তাদের। এখন থেকে আর পরের জমিতে থাকতে হবে না। শুনতে হবে না কটূ কথাও। তাদের সন্তানরা পাবে স্থায়ী ঠিকানা। গড়বে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘরের স্বপ্নপূরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভোলা জেলার চর ফ্যাশন উপজেলার চর কচ্ছপিয়া এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন জমেলা খাতুন। এর আগে দক্ষিণ আইচায় ভাড়া ঘরে বসবাস করতেন তিনি। স্বামীহারা জমেলার চার ছেলেমেয়ে। তাদের নিজস্ব কোনো জমিজমা ছিল না। অর্থকষ্টের মধ্যে কোনো রকম দিনাতিপাত করতেন। মাস গেলেই তাকে গুনতে হতো ভাড়ার টাকা। কোনো মাসে ভাড়া দিতে একটু দেরি হলে শুনতে হতো বাড়িওয়ালা কটূ কথা। এবার সেই মানসিক যাতনা থেকে মুক্তি পেতে চলছে জামেলা খাতুন। চর কচ্ছপিয়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় দুই শতক জমিসহ ঘর পাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে তাকে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেওয় হয়েছে। আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তর হবে।
জানতে চাইলে জমেলা খাতুন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিয়ের কয়েক ৭ বছর পর স্বামীকে হারিয়েছি। তার কোনো ঘরবাড়ি ও জমিজমা ছিল না। নিজেদের জমিজমা না থাকায় মানুষের ঘরে ভাড়া থেকেছি। ঘর ভারা দিতে দেরি হওয়ায় কতকথা শুনতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জামেলা খাতুন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে আজকে আমিসহ অনেকে পাকাঘর পেয়েছে। আমরা তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এখন থেকে আমিও ঘরের মালিক। ভাড়া দিতে দেরি হলে আর কারো কটূ কথা শুনতে হবে না।
খালের পাড়ে পাড়ে ঝুপড়ির ঘরে করে থাকা শাহ আলম ফরাজিও এবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাকাঘর পাচ্ছেন। ভোলার দৌলতখান উপজেলার চর পাতা ইউনিয়নে তার পৈত্রিক নিবাস। নদীভাঙার কারণে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন তিনি। হারান বাপ-দাদার ভিটেমাটি। শূন্য হাতে চলে আসেন মধ্য চর আইচায়। খালের পাড়ে পাড়ে পলিথিন আর খড়কুটো দিয়ে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন; এভাবেই কেটে গেছে তার জীবনের ৭৫ বছর। কিন্তু নিজের নামে কোনো আশ্রয় গড়ে তুলতে পারেননি। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ২ শতাংশ জমিসহ পাকাঘর দিচ্ছেন। আজকে সেই ঘর বুঝে পাবেন। জমিসহ ঘর পাওয়ায় সে খুবই খুশি। শাহ আলম ফরাজি বলেন, নদী আমার বাপ-দাদার ভিটেমাটি কেড়ে নিয়েছে।
এরপর থেকে আমি নিঃস্ব, ভূমিহীন, আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছি। নিজের কোনো জমিজমা নেই। খালের পাড়ে পাড়ে ঘর তুলে থেকেছি। সমাজের বাহিরে ছিলাম, আমার কোনো ঠিকানা ছিল না। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জমিসহ পাকা ঘর দেবে, আমি ও আমার পরিবার তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তার দোয়া করি, আল্লাহ তাকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখুন।
ভোলায় সরাসরি ১২৩৪টি ঘর ভূমিহীন-গৃহহীনদের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে আজ। আগেই ভোলা সদরকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করা হয়েছে। এবার এ জেলার আরো তিন উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন করা হবে। এ প্রসঙ্গে ভোলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আরিফুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মধ্যে ঘর প্রদান করবেন। ইতিমধ্যে ভোলা সদর উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ছয়টি উপজেলাকে ভূমিহীন মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত যেসব ঘরের প্রয়োজন ছিল, সেগুলো আমরা বরাদ্দ পেয়েছি। সর্বমোট ৬ হাজার ৩৫৬টি ঘর আমরা বরাদ্দ পেয়েছি। আজকে জেলার চর ফ্যাশন, বোরহানউদ্দিন ও মনপুরা উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে।
আজ গণভবন থেকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পঞ্চম ধাপে ২৬ জেলার ১৮ হাজার ৫৬৬ জন ভূমিহীনের জন্য নির্মিত ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় ভোলা, কক্সবাজার ও লালমনিরহাটের উপকারভোগীদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে ৭০টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন।
এর মাধ্যমে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত করার প্রত্যয়ে আরো এধাপ এগিয়ে যাবে দেশ।
এক ধাপ এগিয়ে যাবে এসডিজি বাস্তবায়নের পথেও। আশ্রয়ণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম পর্যায়ে সারাদেশে ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি পরিবারকে ২ শতক খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে নির্মিত গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে যেখানে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। এ প্রক্রিয়ায় ইতোপূর্বে ৬ দফায় মোট ৩২টি জেলার সকল উপজেলাসহ মোট ৩৯৪টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ পর্যায়ে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবন্দা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, ভোলা, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জসহ ২৬টি জেলা।