রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আরসার শীর্ষ নেতাসহ গ্রেপ্তার পাঁচ
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার শীর্ষ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। একই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের র্যাব-১৫ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীটির অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন। এর আগে রোববার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। গ্রেপ্তররা হলেন উখিয়ার ক্যাম্প-৫, ব্লক-সি, কুতুপালংয়ের মৃত আবুল বাশার ওরফে মৌলভী নাছেরের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ (৫০), ক্যাম্প-৬, ব্লক-ডি’র মৌলভী আনোয়ারের ছেলে মো. ফয়সাল ওরফে মাস্টার ফয়সেল (২৮), ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশন, এস/৪, বি/৫ এর মৃত মৌলভী রহমত উল্লাহর ছেলে হাফেজ ফয়জুর রহমান (২৪), ক্যাম্প-৮/ই, ব্লক-বি/ ৪৪, বালুখালীর মৃত করিম উল্লার ছেলে মো. সালাম ওরফে মাস্টার সালাম (২০), ক্যাম্প-২২, উনচিপ্রাংয়ের আনু মিয়ার ছেলে মো. জুবায়ের (২৪)। র্যাবের দাবি, আরসার শীর্ষ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, অপহরণসহ ২১টির বেশি মামলা রয়েছে। র্যাব-১৫ অধিনায়ক সাজ্জাদ হোসেন জানান, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আরসার শীর্ষ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ দীর্ঘদিন পাশ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনে থেকে আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ওস্তাদ খালেদের নির্দেশনাক্রমে ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এই তথ্যের সূত্র ধরে মৌলভী অলি আকিজসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালিয়ে ক্যাম্প-৪ এর একটি পরিত্যাক্ত ঘরে গোপন বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশিয় তৈরি এলজি, একটি ওয়ানশুটার গান, ১০ রাউন্ড কার্তুজ, ২ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৩টি বাটন মোবাইল ফোন এবং নগদ ২ হাজার ৫০০ জব্দ করা হয়। সাজ্জাদ হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মো. শহিদুল ইসলাম প্রকাশ মৌলভী অলি আকিজ জানায়, ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ক্যাম্প-৫ এ সপরিবারে বসবাস শুরু করে। সে আরসার নেতৃত্ব পর্যায়ের একজন সক্রিয় সদস্য এবং ক্যাম্প-৫ এর আরসা হেড জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিল। নেটওয়ার্ক গ্রুপে কাজ করতো এবং বিভিন্ন খবরাখবর আরসা কমান্ডারদের নিকট পৌঁছে দিত। পরবর্তীতে সে ধীরে ধীরে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায়ে পৌঁছায়। সে স্বীকার করে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহকে নির্মমভাবে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল সে। এছাড়া মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে ঘটা চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারেও সে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় সে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় ১৩টি হত্যা, একটি অস্ত্র, দুটি অপহরণ, দুটি এসল্ট, একটি ডাকাতি এবং বিস্ফোরক আইনে একটি মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২১টি মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার সবাই ক্যাম্পে আরসা সংগঠনের হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে থাকে। তাদের উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের এই কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত আরসার লজিস্টিক শাখার প্রধান, গান গ্রুপের প্রধান, প্রধান সমন্বয়ক, অর্থ শাখার প্রধান এবং আরসা প্রধান নেতা আতাউল্লাহর দেহরক্ষী মৌলভী অলি আকিজসহ ১১২ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের নিকট থেকে ৫১ দশমিক ৭১ কেজি বিস্ফোরক, পাঁচটি গ্রেনেড, তিনটি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৪টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৬৮ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, চারটি আইডি ও ৪৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র্যাব-১৫।