ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতাল

শয্যা বাড়ছে শামুকের গতিতে নাগরিকসেবা নিয়ে শঙ্কা

শয্যা বাড়ছে শামুকের গতিতে নাগরিকসেবা নিয়ে শঙ্কা

চট্টগ্রাম শহরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতাল (চমেক)। শয্যার সংখ্যা বাড়ছে শামুকের গতিতে। চমেক হাসপাতাল ১৯৫৭ সালে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল থেকে যাত্রা শুরু করে ও পরে ১৯৬০ সালে নগরীর কেবি ফজলুল কাদের রোডে মাত্র ১২০ শয্যা ও কয়েকটি সরঞ্জাম পরিষেবাসহ বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়। তখন হাসপাতালে আইসিইউ সেবা ছিল না। বিগত কয়েক দশক ধরে চমেক হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়লেও আইসিইউ বিগত ছয় দশকে চমেক হাসপাতালকে কয়েক ধাপে ১৯৬৯ সালে ৫০০ শয্যায়, ১৯৯৬ সালে ৭৫০ শয্যায় এবং ২০০১ সালে এক হাজার ১০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। কিন্তু তখনো হাসপাতালে কোনো আইসিইউ সেবা চালু করা হয়নি। জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা, ফেনীসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার অন্তত ৪ কোটি মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ৫০০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে গত ২০১৩ সালে ১ হাজার ৩১৩ শয্যা এবং সর্বশেষ গত ২০২২ সালের জুনে ২ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। শয্যা বাড়লেও এখনো ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে চমেক হাসপাতাল। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শয্যার বাড়ানোর পরও হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার রোগী সেবা নেন। তাই এই বিশালসংখ্যক রোগীকে যথাযথ সেবা দিতে হলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চমেক হাসপাতালে শয্যার আনুপাতিক হারে বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন।

শয্যার হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। ঢামেক হাসপাতালের শয্যা ২ হাজার ৬০০। অন্যদিকে চমেক হাসপাতালের শয্যা ২ হাজার ২০০। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঢামেক হাসপাতাল (বেতন ভাতা ছাড়া) বরাদ্দ পেয়েছে ২০২ কোটি ৫ লাখ ১৬ হাজার। অন্যদিকে চমেক হাসপাতাল পেয়েছে ৯৯ কোটি ৫০ লাখ ৫ হাজার টাকা। শুধু তাই নয় ১ হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের বরাদ্দ পায় ১১৩ কোটি ২৮ লাখ ২২ হাজার টাকা এবং ১ হাজার ২০০ শয্যার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) বরাদ্দ পেয়েছিল ১০৭ কোটি ৩০ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এছাড়া ৯০০ শয্যার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বরাদ্দ পেয়েছে ৭৬ কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার টাকা, ১ হাজার শয্যার শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বরাদ্দ পেয়েছে ৯০ কোটি ৩৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা, ১ হাজার শয্যার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ পেয়েছে ৮৩ কোটি ৮০ লাখ ৬ হাজার টাকা এবং ৯০০ শয্যার সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পেয়েছে ৭৯ কোটি ২৩ লাখ ৮০হাজার টাকা। অথচ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চমেক হাসপাতাল অর্থ বরাদ্দের তালিকায় রয়েছে চতুর্থ স্থানে। শয্যা হিসেবে দেশের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তুলনায় চমেক হাসপাতালের বরাদ্দ বৈষম্যমূলক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বেতন ভাতা ছাড়া প্রাপ্ত এই বরাদ্দ খাবার, অক্সিজেন, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ওষুধ, কেমিক্যাল রিএজেন্ট, গজ ব্যান্ডেজ, কটনসহ জরুরি জিনিসপত্র কেনা হয়ে থাকে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী জানান, চমেক হাসপাতালের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিরা কেউ ভাবেন বলে আমার মনে হয় না। উনারা সব সময় নিজেদের পদ পদবি, ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নিয়ে সরকার প্রধান কিংবা তাদের দলীয় প্রধানের সাথে দেনদরবারে ব্যস্ত থাকেন, যার ফলে স্বাস্থ্যের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের মনোযোগ নেই। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে গরিব রোগীরা। এসব হাসপাতালের বাজেট স্বল্পতার কারণে রোগীরা ওষুধ পাচ্ছে না, যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে পরীক্ষা করাতে পারছে না। এখন চট্টগ্রামের এমপি-মন্ত্রীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা টানেল নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। অথচ চমেক হাসপাতালের বাজেট বরাদ্দ কেন দেশের কম শয্যার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়েও কম সেটি নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। তবে আমাদের কথা হলো, আগামী অর্থবছরের বাজেটে যেন শয্যার আনুপাতিক হারে যেন বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়। চমেক হাসপাতালের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। একইসাথে আমরা জনবলের চাহিদাও দিয়েছি। হাসপাতাল এখনো জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। তাই আমরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১৮টি পদে ৫০৪ জনকে নিয়োগের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। জনবলের ঘাটতি কমলে আশা করি সেবার মান আরো উন্নত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত