ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বুনছে নতুন স্বপ্ন, গড়বে সন্তানের ভবিষ্যৎ

ঘর পেয়ে আনন্দের উচ্ছ্বাস

সারা দেশে আশ্রয় পেল আরো ১৮৫৬৬ পরিবার
ঘর পেয়ে আনন্দের উচ্ছ্বাস

সারাদেশে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’র ঘর পেয়েছে আরো ১৮ হাজর ৫৬৬ টি পরিবার। ঘর পেয়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনছে ভূমিহীন ও গৃহহীনরা। স্থায়ী ঠিকানা পাওয়ায় তাদের চোখেমুখে প্রকাশ পেয়েছে আনন্দ উচ্ছ্বাস। রোদণ্ডবৃষ্টি কিংবা ঝড়ে এখন থেকে তারা থাকবে নিজের ঘরে। নির্মাণ করবে সন্তানদের ভবিষ্যত। পাকা ঘর পেয়ে দুই হাত তুলে করেছেন দোয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদেছেনও কেউ কেউ।

গতকাল আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে আরো ১৮ হাজার ৫৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গৃহহীনদের জমির মালিকানা দলিলসহ পাকা ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় তিনি ঘর পাওয়া মানুষের অনুভূতি শোনেন প্রধানমন্ত্রী।

ভোলা চর ফ্যাশনের চর কচ্ছপিয়া এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন বিবি আয়েশা। ঘর পাওয়ায় যারপরনাই খুশি এই বৃদ্ধা। তার চোখেমুখে আনন্দ উচ্ছ্বাস। একটি পাকা ঘর পেয়ে তিনি যেনো পুরো দুনিয়া জয় করেছেন। ঘর পাওয়ার অনূদিত জানাতে গিয়ে আপ্লূত হয়ে পড়েন। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘২৪ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। এতদিন জমিতে ঘর করে থেকেছি। ঘরটি ভাঙা ছিল। টাকা পয়সা কিছুই ছিল না আমার, যে একটা টিন আইনা সেই ঘর ঠিক করব। প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছেন, বিদ্যুৎ দিছেন, টিউবওয়েল দিছেন। আমি ভাবি নাই এমন একটা ঘর পাব। তাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব। আমার ভাষা জানা নেই।’

একই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া মৎসজীবী জাহাঙ্গীর মাঝি বলেন, নিজের বলতে কিছু ছিল না আমার। কোনো রকমে একটি মাথা গোজার ঠাই ছিল। কিন্তু ঝড়ে তা ভেঙে যায়। পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে থাকতাম। এখন এই ঘর আমার জন্য আশির্বাদ। নামাজ পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করব। আল্লাহ যেনো তাকে সবসময় ভালো রাখেন। দেশের জন্য ভালো কাজ করতে পারেন।

এদিকে কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ভাদিতলা পুর্ব দরগাহপাড়া আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছেন হোসনে আরা। প্রতিবন্ধী হওয়ায় একসময়ে স্বামী তাকে ফেলে চলে যান। সেই থেকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি। অবশেষে আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে কষ্টের দিনের শেষ হচ্ছে তার। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়েছেন। সংসার নামক জীবন খুব কষ্টের ছিল। আপনার কাছ থেকে ঘর পেয়েছি। আপনার কাছে আমি ঋণী। আপনি হচ্ছেন যোগ্য নেতার যোগ্য কন্যা। আপনার হাতে দেশ থাকলে, দেশ এগিয়ে যাবে।’

এদিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেরার মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘর পাওয়া ঝালমুড়ি বিক্রেতা বাবু মিয়ার কষ্ট আরো নিদারুন। মা-ছেলে একসাথে কাজ করতেন। দিন শেষে থাকার জায়গা ছিল না। যে খাবার হোটেলে কাজ করতেন কখনো সেখানেই ঘুমাতেন, কখনো ব্রিজের পাশে ঘুমিয়েছেন। বিয়ের পরে মা, স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে মানুষের বাড়িতে থেকেছেন। সেই দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যখন ঘর ছিল না আমরা অনেক কষ্টে ছিলাম। মাথার ওপর ছাদ ছিল না। কত কান্না করেছি। আমার মেয়ে বলতেন, বাবা আমাদের কি ঘর হবে না। আমি বলতাম হবে মা, আল্লাহর কাছে দোয়া করো। আমার তো টিন কেনারও যোগ্যতা নাই। আজকে অনেক খুশি আছি।’

বাবু মিয়া বলেন, যখন মানুষের বাড়িতে ছিলাম, ওরা শাকসবজি চাষ করত আমি চেয়ে চেয়ে দেখতাম। ভাবতাম আমার বাড়ি থাকলে তো আমিও চাষ করতে পারতাম। এখন আমি শাকসবজি চাষ করি। হাঁসমুরগী লালন করি। নিজের জমিতে গাছ লাগাই। কখনো চিন্তা করি নাই পাকা বাড়িতে থাকতে পারব। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে খুশি হয়ে গান শোনান।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরো ৭০টি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লালমনিরহাটে ১ হাজার ২৮২টি, কক্সবাজারে ২৬১টি এবং ভোলা জেলায় ১ হাজার ২৩৪টি বাড়ি হস্তান্তর করেন। নতুন ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ও উপজেলা নিয়ে সারাদেশে জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৮টি এবং উপজেলা হলো ৪৬৪টি। ভোলা জেলার চর ফ্যাশন, মনপুরা ও বোরহান উদ্দিন উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি এবং চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করেন।

প্রকল্পের আওতায় ভূমি ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে দুই দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিকানা দিয়ে একটি আধা-পাকা বাড়ি দেয়া হচ্ছে, যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই হবে। প্রতিটি বাড়িতে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং বারান্দা রয়েছে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং আগামীকাল আরো ১৮ হাজার ৫৬৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহ ও ভূমিহীনদের ঘর ও জমির মালিকানা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে, ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন (একটি পরিবারে পাঁচজন ব্যক্তি হিসাবে)।

প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সারাদেশে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের প্রায় ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে আশ্রয়ণ এবং অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধুমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত